ইউএনও কে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া
ভোলার চরফ্যাশনে রাজাকার পুত্রের হাতে ব্যবসায়ী সমিতির নিয়ন্ত্রণ
দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় রাজাকারের পুত্র মনির উদ্দিন চাষির হাতে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ব্যবসায়ী সমিতি। এমনটাই গুঞ্জন শোনা যায় চরফ্যাশন উপজেলার জনসাধারনের মধ্যে। কুতুবগঞ্জ মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা তৎকালীন শান্তি কমিটির সভাপতি (রাজাকার) সামছু্িদ্দন মাস্টার (সামছু মাস্টার)’র পুত্র মনির উদ্দিন চাষি। বাবার দেশ বিরোধী কার্যকালাপ সুত্রে যিনি নিজেও এখন বাবার ভুমিকায় অবতীর্ন। সর্বদা নিজের স্বার্থ হাসিল করতে ও ক্ষমতার নেশায় স্থানীয় রাজনীতিতে পালাবদল করে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন বর্তমান চরফ্যাশন উপজেলার ব্যবাসায়ী সমিতির সভাপতি মনির উদ্দিন চাষি।
জানা গেছে, ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় ছাত্রকালীন সময়ে যিনি ছিলেন শিবিরের শীর্ষ নেতা। পরে নিজ বসতবাড়ী চরফ্যাশন উপজেলায় গিয়ে যুব ব্যবসায় সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এরপরে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন দাপুটে যুবদল নেতা। ক্ষমতার নেশায় ২০১০ সালের ১০ই জুন বর্তমান চরফ্যাশন উপজেলা বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেনের হাত ধরে ও চরফ্যাশনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব’র ছত্র ছায়ায় তিনি যোগদান করেন যুবলীগে এবং ২০১০ সালের ৬ই নভেম্বরে তিনি বনে যান চরফ্যাশন বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি।
অপরদিকে তার বড় ভাই বিশিষ্ট জামাত নেতা ও তার মেঝো ভাই বিএনপি দলীও কৃষকদল সভাপতি। এক কথায় নব্য-আওয়ামীলীগ নামে ক্ষ্যাত চরফ্যাশন ব্যবাসায়ী সমিতির সভাপতি মনির উদ্দিন চাষি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী এক নেতা বলেন, তিনি শুধু হাইব্রিড নেতাই নন ব্যবসায়ী সমিতির কার্যক্রমে অনিয়মের পাশাপাশি তিনি পরোক্ষভাবে চরফ্যাশন হকার্স সমিতিরও পরিচালক।
তিনি আরো বলেন, চরফ্যাশন বাজারের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা নিয়ে সভাপতি চাষিসহ অনিয়মকারী কিছু ব্যবসায়ী ইউএনও রুহুল আমিন এর প্রতি বিক্ষুব্দ হন। এছাড়া করোনা কালিন সময়ে রক্তচোষা অসাধু ও অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা মনগড়া দ্রব্যেরমুল্য বৃদ্ধি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারন জনগন ও নিম্ম আয়ের মানুষের সংকট মোকাবেলায় ইউএনও রুহুল আমিন ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীদের জিম্মিদশা থেকে সাধারন মানুষকে যেভাবে উদ্ধার করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের ডিলিং লাইসেন্স না থাকায় ও মাক্স না পরায় অর্থদন্ড দিয়েছেন। এসবের ফলে চরফ্যাশন ব্যবসায়ী সমিতি সহ মুস্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী ইউএনও রুহুল আমিন এর বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছেন এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের তাদের কুচক্রি সিদ্ধান্তের সাথে যুক্ত হতে উৎসাহিত করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্যবাসায়ী সমিতির সভাপতি মনির উদ্দিন চাষি ও তার কিছু সংখ্যক অনুসারি ব্যতিত উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রুহুল আমিনকে নিয়ে অন্য কোন ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ নেই। এ ব্যাপারে চরফ্যাশন বাজারের এক পোশাক বিক্রেতা বলেন, ইউএনও সাহেব তার নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। হয়তো করোনা মোকাবেলায় তিনি অভিযান চালিয়ে মাঝে মাঝে মাস্ক ব্যবহারে সকলকে অতিরিক্ত সচেতন করেন। এর বাহিরে তার প্রতি আমাদের অন্য কোন অভিযোগ নেই।
এবিষয়ে ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মনির উদ্দিন চাষির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি সকল ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী জনসাধারনকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে আমি এ অভিযান পরিচালনা করেছি এবং এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে, কিন্তু কিছু সংখ্যক জনগনের অবহেলা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে তাদের অনাগ্রহমূলক আচরণ অন্য সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা না মানার বিষয়কে উৎসাহিত করে।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু দুঃখের সহিত বলতে হয় যে, চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন প্রাণঘাতী ব্যাধি করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে, বাজারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে ও ডিলিং লাইসেন্স নিশ্চিত করতে এ অভিযান পরিচালনা করা হলে বাজার সমিতির কিছু অতি উৎসাহী নেতৃবৃন্দ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ও সরকারের আইনকে তোয়াক্কা না করে তাদের ব্যক্তি স্বার্থে কিছু নিরিহ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করছে।
উল্লেখ্য, জরিমানা ও ঘন ঘন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার প্রেক্ষিতে চরফ্যাশন উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতি গত ১৬ ই নভেম্বর ইউএনও রুহুল আমিন এর অপসারন দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।