লালমোহনে সন্তানদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো এক আদর্শবান দম্পত্তি
জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)
(গত সংখ্যার পর) রেশমীর যেন এ জায়গায় এসে মনটা কেমন হয়ে যায়। ভক্তিতে শ্রদ্ধায় নিজেই নিজকে হারিয়ে ফেলে। সৌন্দর্যের ধ্যানরত বনানী, সুপারী বিথী ও নারিকেলের বিথীর ফাঁকে আকাশের বড় চাঁদটা এসে উকি দেয়। তখন আরো ভাল লাগে আকাশের শুক্ষè তারাগুলি। আরো বেশি ভাল লাগে সেই ক্ষমাসুন্দর নিখিলের সুন্দর মহান সৃষ্টিকারী। মনের মধ্যে কত কথা বলাবলি করে রেশমী কাকে বলবেন, বাবা-মা আছেন অনেক দূরে। তারা রেশমীর মুখে এ সব কথা শুনলে আরো দুঃখ পাবে। তাই মনের গহনে যে ক্ষত তা ক্ষতই রেখে গেল।
রেশমী রেজার কাছে আসার পর থেকেই রেজা সব সময়ই রেশমীকে হাটা-চলা, খাওয়া-দাওয়া, সর্বত্র মানসিক ও শারীরিক কষ্ট দিত। তাকে রেশমীর বাঁচার পক্ষ থেকে কিছুই দেওয়া হয় নি। তার বন্ধুরা বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ী থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। সম্পদের মোহে রেজা জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। রেশমী শুনে মনে মনে দুঃখ পায়, কখনো রেজার সামনেই কাঁদে। মেয়েরা সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু মা-বাবার নামে বদনাম সহ্য করতে পারে না। রেশমীর এখন স্পষ্ট মনে পড়ে যে ঘটক বিয়ের কথা নিয়ে এসেছিল তাকে তাঁর বাবা বলেছিল- জামাই কি চায় ? আমি তাকে আমার নতুন বাড়ীটা লিখে দিব।
ঘটক বলেছিল, না ছেলে ওসব চায় না। সে ওসব নিলে তার খুব ছোট মনে হবে। সে শুধু আপনার ছেলের মত ¯েœহ চায়। আর চায় আপনার দোয়া, আপনার দোয়াই জীবনের পাথেয়। রেজার যখন এক বছর বয়স তখন তার বাবা দিল্লীতে মারা গেল। বোনটা তখন পেটে। এ নিয়ে তার মা বিধবা হলো। খুলনার বয়রা তাদের বাড়ী। খুলনা থেকে প্রায়ই দুই মাইল। তার দাদু তাদের ছোটবেলায় ভরন-পোষণ দিয়ে বড় করে তুলেছিল। এক চাচা, সে নিজের ভোগ-লালসায় ব্যস্ত থাকত। তাদের প্রতি কোন যতœবান ছিল না। রেজার বাবা একজন বড় মৌলভী ছিলেন। পরে দিল্লীতে মাওলানা টাইটেল নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। শুনা যায় মাওলানা সাহেব নাকি অনেক বড় জ্ঞানী লোক ছিলেন। অনেক বয়স্ক লোকেই তাকে চিনত। তিনি নিজে শিক্ষিত হয়ে বংশধরদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি দিল্লীতে ২৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। (চলবে—–)