নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদী মিতু
ভোলার ভেদুরিয়ায় আলোচিত ধর্ষণ মামলায় ৩ মাসেও গ্রেফতার হয়নি আসামী
(অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মামুন)
ভোলার ভেদুরিয়ার আলোচিত ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার ৩ মাসেও গ্রেফতার হয়নি আসামী। মামলা করে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলা বাদী আমেনা আক্তার মিতু।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আমেনা আক্তার মিতু ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর রমেশ এলাকার ১নং ওয়ার্ডে খালা নাজমা আক্তার হাওয়ার বাসায় বেড়াতে আসে। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার পর ভেদুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন মুরগীর খামার করার জন্য নাজমা আক্তার হাওয়ার বাসায় রুম বাড়া করতে গেলে সেখানে দেখা মিলে মিতুর সাথে। প্রথমদিন দেখা হওয়ার থেকে মামুন পরপর কয়েকদিন মিতুর খালা নাজমার বাসায় যাওয়া আসা করে। এভাবে প্রতিদিন যাওয়া আসা করলে একপর্যায়ে মামুন মিতুকে প্রেমের অফার দেয়। পরবর্তিতে তাদের দু’জনের মধ্যে ভাব জমে উঠলে মামুন মিতুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিয়ের প্রস্তাবের পর থেকে মামুন বিভিন্ন সময় বাসায় গিয়ে মিতুর স্পর্শকাতর স্থানে দেয় এবং খারাপ কাজের জন্য আহ্বান করে। এভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক। মাঝে-মধ্যে দেখা সাক্ষাতও হয় তাদের। এর এক পর্যায়ে মামুন মিতুকে তার খালা হাফসার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে সুযোগ বুঝে মিতুর অমতে তার খালার বাসায় রুমের দরজা আটকিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শ্বাসরোধ করে তার সাথে কয়েক বার দৈহিক মেলামেশা করে।
এসময় মিতু কান্নাকাটি করলে তাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামুন মিতুকে বলতে থাকে আমি তোমাকে বিয়ে করবো, তুমি চিন্তা করো কেন। একথা বলে মিতুকে শান্তনা দেয় মামুন। ওই ঘটনায় পর থেকে ভুক্তভোগি আমেনা আক্তার মিতু ভোলা সদর থানায় স্ব-শরীরে হাজির হয়ে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩)এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৫/৫৪১, তারিখ-৩/০৯/২০২০ইং।
বাদি আমেনা আক্তার মিতু জানান, গত ০৩/০৯/২০২০ইং তারিখে ভোলা সদর থানায় আমি একটি মামলা করি, মামলা করার তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন আসামী ধরতে পারেনি। তা হলে কি বুঝবো প্রশাসনের চেয়ে আসামী মামুনের ক্ষমতা বেশী ?
বাদিনী আরো জানান, আসামীকে না ধরার কারনে বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নেওয়াসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাহাদুর খাঁ গত ০৪/১১/২০২০ইং তারিখ রাত ৮.০০ টার সময় তাকে (বাদীকে) ০১৭১৮৯৩৪৪৫৭ ফোন নাম্বার দিয়ে ১২ মিনিট কথা বলেন। এ সম তিনি বাদিনী মিতু আক্তারকে দৌড়-ঝাপ না করে কিছু টাকার বিনিময় মামলা তুলে নিতে বলে এই ইউপি সদস্য।
অন্যদিকে আসামী মামুনের বোন জামাই সেন্টুসহ আরো বেশ কয়েকজন গত ১০/১০/২০২০ ইং বিকাল ৪টার সময় বাদিনীর দূর সম্পর্কের নানা রাজ্জাককে মামলা তুলে নিয়ে মিলমিশ হয়ে যেতে বলেন। আর যদি মামলা তুলে না নেয় তা হলে পরিনাম ভালো হবে না বলে হুমকিও দেয় তারা। বর্তমানে আসামী এবং তার লোকজনের বিভিন্ন হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মিতু ও তার পরিবার এবং স্বজনরা।
বাদিনী এ প্রতিবেদককে জানান, আসামী এলাকায় প্রকাশ্য ঘোরা ফেরা করছে। আসামী ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার কারণে মামলার ৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ আসামী ধরতে গড়িমশি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ কবির এর সাথে কথা বললে তিনি ভোলার বাণীকে জানান, ঘটনার পর থেকে আসামী পলাতক আছে। তাছাড়া মামলা হয়েছে দেরীতে। এ সুযোগে আসামী গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তবে আসামী ধরার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, আমরা সর্বত্র চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এনায়েত হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ভোলার বাণীকে জানান, মামলার আয়ু যথেষ্ট এ্যাকটিভ আছে। আমরা আসমী ধরার জন্য মোবাইল ট্রাকিং পরিচালনা করছি। কিন্তু আসামী বিচক্ষণ হওয়ায় এবং তার নিজের ফোন ব্যবহার না করে অন্য ফোন ব্যবহার করে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তারপরও আসামীকে ধরতে সর্বত্র জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহাসিন আল ফারুক ভোলার বাণীকে জানান, ভোলার চারো পাশে নদী হওয়ায় আসামী স্পীড বোট/নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে আমাদের আসামী ধরতে একটু কস্ট হচ্ছে। তাছাড়া বাদি থানায় যখন মামলা করতে আসে, তখন আসামিকে জানান দিয়েই আসে। তাই তখন থেকে আসামী পলায়নে রয়েছে। তবে এতোটুকু নিশ্চিত দিচ্ছি যে, মামলার আয়ু আসামী ধরতে যথেষ্টভাবে আন্তরিক এবং অভিজ্ঞ। আসামী যতবড় শক্তিশালি হোক না কেন আইনের উর্ধে কেউই নন। আসামীকে যে কোন বিনিময়-ই হোক গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।