সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : আজিমের বন্ধের প্রায় ১৫ দিন কেটে গেল। রেশমীর কাছে আজিম প্রায় পুরাতন হয়ে এল। শুক্ল পক্ষের চাঁদটা যখন বড় হয়ে উঠল, তখন আজিম বায়না ধরে, চলেন চাচাী নদীর কাছ দিয়ে বেড়িয়ে আসি। রেশমী রাজি হয়, মিঠুকে সাথে করে ওরা বেড়ায়। আজিম সাইকেল চালাতে জানত না। চাচার সাইকেলটা নিয়ে শিখতে চাইল, রেশমী অনুমতি দিল। আজিম ৭দিনের মধ্যে সাইকেল চালানো শিখে ফেলল। রেজা তখন অনেক দূরে ৭দিনের জন্য মফস্বলে গিয়েছিল। তখন বৈশাখ মাস। প্রচন্ড গরম। গরমের তাপে শরীর যেন ক্লান্ত লাগত। সন্ধ্যা হলেই আজিম চাচীকে নিয়ে নদীর পাড়ে যেত ঠান্ডা বাতাসের জন্য।
একদিন সন্ধ্যায় রেশমী ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়েছিল। কে যেন লাঠি দিয়ে জানালার ফাঁকে খোঁচা মারল। রেশমী ভয়ে চিৎকার করে উঠল। অনেক্ষণ পর আজিম ঘুরে এসে বলল, আমি আপনাকে ভয় দেখিয়ে ছিলাম। রেশমী ভাবল এ আবার কেমন ছেলে। অন্যকে ভয় দেখিয়ে মনে মনে আনন্দ পায়। ছুটি প্রায়ই শেষ হয়ে এল, আজিম চলে গেল। তার চলে যাওয়ার পর রেখে গেল ¯েœহ, মায়ামমতার একটা আলেখ্য। আজিমদের বাড়ী ছিল রূপসা নদীর পূর্বপাশে। গ্রামের একজন মাতব্বারের ছেলে। তারা অনেক ভাই, বোন ছিল। তাঁর বাবা দুই বিয়ে করেছে। তার আপন মা একটু অসুস্থ্য ছিল। ছোটবেলা থেকে সে আদর যতœ যথাউপযুক্ত পায় নি। বড় ভাই গ্রামের মৌলভী, তার মামার জেল হয়েছিল। আজিম রেজার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হত।
এক পর্যায়ে র্বষা এসে গেল। রেজা বাগেরহাট বদলী হলো। বাগেরহাট ডাক বাংলায় ওরা অবস্থান করত। বাগেরহাটের ডাকবাংলা ও নদীটা তাদের কাছে খুব ভাল লাগত। কিছুদিন অবস্থানের পর তারা বাগেরহাট কলেজের কাছে একটা বাড়ী পেল। এখানে রেশমীর ২য় ছেলে সোহেল হলো। রেশমীর শরীর তেমন ভাল ছিল না। ক্লান্তি যেন লেগেই থাকত। দুটি ছেলেকে নিয়ে রেশমী দিনগুলো দুঃখে, সুখে চলে যেত লাগল। বাগেরহাট এসে তারা খানজাহান আলীর মাজার দেখতে গেল। শ্রদ্ধা-ভক্তিতে মাথাটা নত হয় দরগার উদ্দেশ্যে। খানজাহান আলী (রহ:) অলৌকিকতার নিদর্শন স্বরুপ দরগায় কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামের দুটি কুমির আছে। ওদের নাম ধরে ডাকলেই চলে আসে। দরগাটা একটা লালমাটির উঁচু টিলার উপর নির্মিত। নিঝুম, নিস্তব্ধ, নীরব যেন কোন তপস্যারত দরবেশের স্মৃতিস্তম্ভ। প্রার্থনায়, সাধনায় একে করে তুলেছে তীর্থস্থান। মানুষ যত দুঃখ, কষ্ট নিয়ে যাক; মানুষের মনে সত্যিকারের শান্তি মিলে।

(চলবে—–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।