ভোলায় খালে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের অভিযোগ

ভোলায় বিভিন্ন নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর ফলে মাছের সাথে সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে। আর সে কারণে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। ভোলার লঞ্চঘাট থেকে সদরের দিকে প্রবাহমান খালে অ্যালোমিনিয়াম ফসপাইড নামক (ট্যাবলেট) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ও পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন এর সদুরচর এলাকার কাশেম মাল ও তার চার পুত্র নুরে আলম, নিরব, ফিরোজ, রিপন এবং ধনিয়া বাড়ির ফোরকান সহ কিছু অতি লোভী অসাধু মৎস্য শিকারী গভীর রাতে স্রোতের বেগ কম থাকার সুযোগে খালে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে চিংড়ি মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। জোয়ার পরিপূর্ণ হওয়ার পর তারা খালের নিচের অংশে ছোট ফাঁসযুক্ত ভেষালি জাল পেতে দেয়।
এরপর ডিঙি নৌকা বেঁয়ে দ্রুত খালের অগ্রভাগে পৌঁছে রাসায়নিক বিষ ছিটিয়ে দেয় ধুরন্দর এসব মাছ শিকারীরা। ভাটা শুরু হলে খালের অগ্রভাগের পানি নিচের দিকে চলে আসতে শুরু করে। তখন বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত খালের ভেতরের ছোট বড় সমুদয় চিংড়ি মাছ মরে খালের নিচের অংশে পাতানো ভেষালি জালে জড়ো হতে থাকে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এভাবে বিষ প্রয়োগ করে দৈনিক একজন মাছ শিকারী কয়েক হাজার টাকার মাছ শিকার করে। বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত চিংড়ি কিছুক্ষণ পর লালচে বর্ণ ধারণ করে। এসব অসাধু মাছ শিকারীরা বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন ভোলার খালে সারা বছর বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে আর্থিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে ছোট প্রজাতির সমুদয় মাছ। ক্ষতি হচ্ছে ভোলার মৎস্য সম্পদের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পানিতে অনেক উপকারী প্রাণী থাকে যা বিষ ক্রিয়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মৎস্যসম্পদ যেভাবে ধ্বংস হবে অন্যদিকে পরিবেশও পড়বে ক্ষতির মুখে। তারা মনে করেন, জেলার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও প্রশাসন চাইলে এটা রোধ করা সম্ভব।
তবে সাধারণ মানুষ মনে করেন দেশের স্বার্থে, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এ বিষ প্রয়োগ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করা দরকার। যদি তা বন্ধ না করা যায় তাহলে আগামী প্রজন্ম আর প্রাকৃতিক মাছ পাবে না।
অভিযুক্তদের কাছে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন ভোলার খালে বিষ দিয়ে মাছ অন্য কেউ ধরতে পারে তবে এমন কাজে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমার কাছে খালে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারের তথ্য আছে। আমি কোস্টগার্ডকে জানিয়েছি তারা এঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে আমায় নিশ্চিত করেছেন। রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার একটি মারাত্মক অপরাধ এধরণের অসাধু মাছ শিকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।