সর্বশেষঃ

ভোলার বাপ্তায় টাকার বিনিময়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের বিয়ে পড়ালেন এক কাজী

(অভিযুক্ত কাজী শাহেদুল ইসলাম)

ভোলার বাপ্তায় টাকার বিনিময়ে এবং জোড়পূর্বক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের বিয়ে পড়িয়েছেন এক কাজী এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে মেয়ের বাড়ীতে এ বিয়ে পড়ান কাজী।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ দুলালের ছেলে মোঃ ইউনুছ ঢাকায় তার খালাতো ভাইয়ের কাছে বেড়াতে যায়। খালাতো ভাইয়ের দোকানে কাজ করতো এক কর্মচারী। তার বাড়ী নারায়নগঞ্জে। ওই কর্মচারীর সাথে ইউনুছ তাদের বাড়ীতে বিভিন্ন সময়ে বেড়াতে যেত। কর্মচারীদের বাসার কাছেই ছিল মেয়ে জাকিয়ার বড় বোনের বাসা। সে ওইখানকার একটি গার্মেন্টস্-এ চাকুরী করে। সেই সুবাধে জাকিয়াও বোনের বাড়ীতে বেড়াতে যায়। তখনই ইউনুছ আর জাকিয়ার মধ্যে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরী হয়। ওই সম্পর্কের ফলে ইউনুছ ও জাকিয়ার মধ্যে মোবাইলে কথা চলতে থাকে। মেয়ের বাড়ীও সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে। উভয়ই গ্রামের বাড়ী (ভোলায়) চলে আসে।
আরো জানা গেছে, মেয়ের সাথে ছেলের পরিচয়ের একপর্যায়ে মেয়ের মা লাইজু বেগম ইউনুছ কে তাদের বাড়ীতে ডাকেন। ইউনুছ সরল মনে জাকিয়াদের বাড়ীতে যায় দেখা করার জন্য। কিন্তু জাকিয়ার পরিবারের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে ইউনুছকে আটকিয়ে জোরপূর্বক গত ১৭/০২/২০২০ইং তারিখে কাজী ডেকে মেয়ের সাথে বিয়ে পড়ান। ওই বিয়ে পড়ানোর পর থেকেই ছেলে ইউনুছ লোক লজ্জায় বাড়ী থেকে ঢাকায় চলে যান। তার পড়ালেখা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন এসএসসি পাস করা ছেলেকে কিভাবে কাজী বিয়ে পড়ান। এসএসসি ও জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ- ১২ জুলাই ২০০৩ইং। যখন বিয়ে পড়ান তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর ৭ মাস ৩দিন। এ বয়সের ছেলেকে কাজী কিভাবে বিয়ে পড়ান ? যখন বিয়ে পড়িয়েছেন তখন কি কাগজের অনুবলে তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন ?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী শাহেদুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে এবং জোড়পূর্বক ওই বিয়ে পড়িয়েছেন। তার বাবাও একজন কাজী। তারা বাবা-পুত্র কাজী হওয়ায় কোন নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। কাগজ-পত্র ছাড়াই তারা বিভিন্ন স্থানে বিয়ে পড়াচ্ছেন এমন একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত কাজী শাহেদুল ইসলামের বাড়ী পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আবু বকর কাজী বাড়ী।
ছেলে ইউনুছ এর বাবা মোঃ দুলাল অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে বয়স হয়নি। মেয়ের পরিবার ষড়যন্ত্র করে জোড়পূর্বক বিয়ে পড়িয়েছে। আমি এই ষড়যন্ত্রমূলক বিয়ে থেকে আমার ছেলের মুক্তি চাই এবং কোন-প্রকার কাগজ পত্র ছাড়া একজন কাজী কিভাবে বিয়ে পড়ান ? তার তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
মেয়ে জাকিয়া’র মায়ের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে কি না তা আমি জানি না। তবে আমার মেয়ে আরো ৫ বছর আগে মেট্রিক পাস করেছে। সাংবাদিকরা যখন তাকে বিভিন প্রশ্ন করতে থাকেন তখন তিনি মোবাইলের কলটি কেটে দেন এবং ফোন বন্ধ করে রাখেন।
এদিকে ইউনুছ ভোলা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করে। তার জন্ম তারিখ- ১২ জুলাই ২০০৩ইং। তাহলে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে কিভাবে বিয়ে পড়ান কাজী। এ বিষয়ে কাজী শাহেদুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই তারিখে বিয়ে পড়াইনি। তখন সাংবাদিকরা বিবাহ রেজিষ্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদেরকে বিবাহ রেজিষ্ট্রার খাতা দেখানো যাবে না বলে লাইন কেটে দেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।