সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

 

(গত সংখ্যার পর) : এ কিন্তু অন্যরকম ছবি কথা বলছে। সত্যিকার মানুষের মত নিজের জীবনের সুখ, দুঃখ অনুভূতি নিজেই প্রকাশ করে। রেশমীর ভাল লাগছে। সে নিজের বাসার প্রতিবেশীদের বাসায় বেড়াতে যায়। যাদের বাসায় যায় তারা সবাই রেশমীর মার বয়সী। কোথাও একজন সমবয়সী পায় না। ওরা ছালেহা এছাহাক স্কুলের কাছের বাসাটা ছেড়ে আবার যমুনা নদীর কাছে একটা একতলা বিল্ডিং নিল বাসা থেকে নদী খুব কাছে। রেশমী চেয়ে দেখে সন্ধ্যা বেলা কত লোক যায় ভাদ্রের উতলা যৌবন ষোড়শীকে দেখতে।
পূঁজার ছুটি এসে গেল। আমিমের চিঠি পেল রেজা, আজিম এ বার পূঁজার ছুটিটা সিরাজগঞ্জে তাদের কাছেই কাটাবে, দিন তারিখ নির্দিষ্ট হলো। বাসার কাজের লোককে বলা হলো সিরাজগঞ্জ ঘাট থেকে ওকে নিয়ে আসতে। সিরাজগঞ্জ বেশ উন্নয়নশীল বন্দর ছিল। বড় বড় পাট ব্যবসায়ী ছিল। অনেক ইংরেজ সাহেব ঘর-বাড়ী করে সেখানে থাকত। অনেক দামী মূল্যবান আসবাব পত্র অন্য কোথাও না থাকলে সিরাজগঞ্জে পাওয়া যেত। বড় বড় আই.পি.এস, এস.ডি.ও দ্বারা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত। দৈনিক চার-পাঁচবার করে ট্রেন আসা যাওয়া করত। যমুনা নদীতে ভাসত বড় বড় জাহাজ। ভাসত এবং অবস্থান করত বড় জাহাজগুলো। দেশের মালামাল আমদানী রপ্তানীর প্রাণ কেন্দ্র ছিল সিরাজগঞ্জ এলাকা। যমুনা ঘাটে বসে বসে মানুষ এ সকল দৃশ্য দেখত।
আজিম সিরাজগঞ্জ ঘাট থেকে রাত ৮টায় এসে বাসায় পৌঁছল। রেশমী তখন ঘুমিয়েছিল। রেজা উঠে দরজা খুলে দিল। রেশমী আজিমের জন্য তখন কোন কর্তব্য বোধ মনে করেনি। আসবে আসুক, তাতে তার কি ? আর রেজার উপর রেশমীর একটা আক্রোশ ছিল। যখন রেজা আজিমকে ঢাকা বি.এসসি পড়ার খরচ দেয়, তখন রেশমীকে একটু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনও মনে করে নি। আর ছেলেটাও কি রকম পরের টাকাগুলো নিয়ে পড়ছে, তাতে তার কোন সংকোচ নেই। আশ্চর্য, ভাবতে রেশমীর গা রাগে জ্বলে যায়।
রেশমী আজও পূর্বের ন্যায় ঘুম থেকে উঠল, কাপড়-চোপড় ছাড়ল, মুখ-হাত ধুয়ে ফ্রেশ হলো। মিঠুকে পোষাক বদল করল। শুনলো আজিম এসেছে, পাশের রুমে আছে। রেশমী মিঠুকে নিয়ে খাবার টেবিলে খেতে বসল। রেজা এসে বলল, একি আজিমকে ডাক না ? রেশমী বলল, ওহ ! ভুলে গিয়েছিলাম। রেজা আজিমকে নিয়ে খেতে বসল। রাজ্যের গল্প জুড়ে দিল। ঢাকার, মুসলিম হলের, ইউনিভার্সিটির, চাকুরীসহ বিভিন্ন গল্প, খাওয়া শেষ হলো। কিন্তু কথা শেষ হল না। রেশমী কিছু শুনল, কিছু শুনল না। রেশমী ঘরে এসে টেবিল ক্লথে ফুল তুলতে লাগল, মিঠুকে বয়টাকে দিয়ে বাহিরে পাঠিয়ে দিল।
রেজা কিছুক্ষণ পর এসে বলল, কৈ তুমি তো আজিমের সাথে আলাপ করলে না। রেশমীর যেন আলাপ করতে লজ্জা লাগে। সেই একবার তাকে সঙ্গে করে এসে সিরাজগঞ্জে রেখে গিয়েছিল। দু-চার দিন ছিল, এইতো তার সাথে তার পরিচয়। আবার দীর্ঘ ছয় মাস পর এল। দুপুরে খাবার সময় রেজা, রেশমী ও আজিম এক সাথে খেতে বসল। রেজা আগেই খেয়ে উঠে চলে গেল। রেজা চিরদিন তাড়াতাড়ি খায়। কিন্তু রেশমী আজীবন আস্তে আস্তে খায়। আজিমও রেশমীর পথ অনুসরন করল। রেশমী মাঝে মাঝে বলে ওটা খান, এটা খান, আর নিজে নিজে খায়। রেশমীর যেন আজিমের সাথে গল্প করার কিছুই নেই। একটু লজ্জায় সংকোচে রেশমী ভাত খেয়ে উঠল।
বিকালের দিকে আজিম সে বলল, চাচী মিঠুকে দিন, যমুনার কাছ থেকে ঘুরে আসি। রেশমী মিঠুকে পায়জামা, পাঞ্জাবী পরিয়ে দিল। পায়ে লাগড়ি জুতো দিয়ে দিল। মিঠুও দাদুর সাথে হাত ধরে বেড়াতে গেল। রেশমীর মন যেন আজিমের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে, কিন্তু আজিম যেন পায়ে পড়ে তার কাছে এগিয়ে আসতে চায়। আজও ওরা এক সঙ্গে খেতে বসল, রেজা অনেকক্ষণ আগেই খেয়ে চলে গেল। রেশমী প্রতিদিনের মত খেয়ে চলছে। আজিমও তার সাথে সমতা বজায় রাখছে। রেশমী বলল, একি, আমাকে অনুসরন করলে আপনার অসুবিধা হবে, আপনি খেয়ে যান। আজিম একটু হাসল। বলল, সে কি কথা, আমি খেয়ে যাব, আর আপনি একা একা খাবেন ?

 

(চলবে———–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।