সর্বশেষঃ

এক শিশুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা হাসপাতালে প্রেরণ, অভিযুক্ত চায়ের দোকানদারকে খুঁজছে পুলিশ

মনপুরায় মসজিদে মিলাদের আঙ্গুলি খেয়ে অসুস্থ্য ॥ ২১ জন হাসপাতালে ভর্তি

ভোলার মনপুরায় তিন মসজিদে মিলাদের আঙ্গুলী খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সহ ২১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে এক শিশুর অবস্থা বেগতিক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক ডাঃ মশিউর রহমান। এছাড়াও কমপক্ষে ২০-২৫ জন রোগি স্থানীয়ভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছে।
শুক্রবার রাত ১১ টার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ওই রোগিদের বমি সহ পেট ব্যাথা শুরু হলে মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এর আগে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর ৩ টায় উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের তিন মসজিদে মৃত এক মহিলার নামে মিলাদ পড়ানো হয়। পরে তবারক হিসাবে আঙ্গুলী দেওয়া হয়।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অসুস্থ্যরা হলেন, জালাল (৪০), আমির (১৬), নাহিদ (৫), নাছনাইন (১৩), বায়জিদ (২), মেহেদী (১১), তুহিন (২), শিহাব (১৫), আবু বক্কর (১৬), মামুন (১৪), সুমন (১৩), সোনিয়া (১৭), আবদুল্লাহ (১০), ঝর্না (২৫), তামান্না (১৭), ফাতেমা (৪), হোসেন (২১), সাব্বির (২), আজিজ (৪০), করিম (৪), আপপান (৩)। এদের মধ্যে দুই বছরের শিশু বায়জিদের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এদের সবার বাড়ি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডে।
অসুস্থ্য রোগি ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, হাজিরহাট ইউনিয়নের ভূইয়ারহাট এলাকার মাজু ব্যাপারির স্ত্রী গত সপ্তাহে মারা যান। স্ত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর হাজী ইব্রাহীম জামে মসজিদ, ভূইয়ার হাট জামে মসজিদ ও জাফর উল্লাহ চৌধুরী জামে মসজিদে মিলাদ পড়ানো হয়। ওই মিলাদে ভূইয়ার হাট বাজারের ব্যবসায়ী চায়ের দোকানদার হান্নানের দোকান থেকে আঙ্গুলী ক্রয় করে মিলাদের পর তবারক হিসাবে বিতরন করা হয়।


পরে ওই তবারক অনেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে গেলে মহিলারা সহ শিশুরা মিলাদের তবারক (আঙ্গুলী) খায়। পরে সন্ধ্যার পর মিলাদের তবারক আঙ্গুলী (যা গ্রামের চায়ের দোকানে ময়দা ও চিনি দিয়ে তৈরী করা হয়) খাওয়া সবার পেটের ব্যাথা, বমি শুরু হয়। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ তার হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখনও কমপক্ষে ২০-২৫ জন অসুস্থ্য রোগি বাড়িতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানিয়েছেন। রাতেই ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সেলিম মিয়া ও হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দীপক হাসপাতালে রোগিদের দেখতে আসেন।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র দাবী মতে, মিলাদের তবারকের আঙ্গুলী বানানোর ময়দায় কয়েকদিন আগে পেট্রোল পড়েছিল। পরে ওই ময়দা রোদে শুকানো হয়। ময়দা শুকিয়ে পরে আঙ্গুলী তৈরী করে ভূইয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী চায়ের দোকানদার হান্নান। ওই পেট্রোল মিশানো ময়দার আঙ্গুলী মিলাদে বিতরন করা হয়। এদিকে এই ঘটনার পর অভিযুক্ত চায়ের দোকানদার হান্নানকে খুঁজছে পুলিশ। চায়ের দোকানদার হান্নান পলাতক থাকায় এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওসি সাখাওয়াত হোসেন।


এ ব্যাপারে হাসপাতালের কর্তব্যরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মশিউর রহমান জানান, মিলাদের আঙ্গুলীতে ফুডপয়েজিং (খাদ্যে বিষক্রিয়ায়) সমস্যায় রোগিরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে এক শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সেলিম মিয়া জানান, খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। পঁচা-বাসি খাবার যারা বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।