সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : রেশমী খুলনা থেকে আসার দু’দিন পরেই আবার রেজা মফস্বলে গেল। রেশমীর এ ব্যাপারটা মোটেই ভাল লাগল না। কোথায় স্বামীকে সে নিবিড় করে পাবার জন্য ব্যাকুল কামনা জানাল খুলনা থেকে বিকাল ৫টার এসে তারা সিরাজগঞ্জ নামল, বাসায় আসতে আসতে ছ’টা বেজে গেল। তখন রেজা বাসায় ছিল না। কাছে কোথাও যেন গিয়েছিল। ঘরে ঢুকেই রেশমীকে দেখে অবাক হয়ে গেল। পথে আবার হটাৎ মিঠুর ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়ে গেল। রেশমী বার বার রেজাকে সে কাহিনী শোনাল। সন্ধ্যাবেলায় রেজা বারান্দায় বসে কয়েকজন ভদ্রলোকের সাথে গল্প করছিল। মিঠু তখন ঘুমিয়ে পড়ছে। মিঠুর গায়ে মশারি দিয়ে রেশমী চেয়ে আছে তার স্বামীর গন্তব্য পথের দিকে। রেজা গল্প করতে করতে রাত প্রায় ১১টা বেজে গেল।
রেশমী মনে যেন আকাশ ভরা অভিযান নেমে এল। এতদিন পরে এল, আর তার স্বামী কি না শুধু গল্পই করছে। তারপর অনেক রাত্রে রেজা ঘুমাতে এল। রেশমী অভিযান ভরা হৃদয় মনের রাগ মনে চেপে ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর দিন অফিসে যাওয়ার পর তার পুরানা কাজের ঝিটা তাঁর সাথে গল্প করল সাহেবকে এ কয় দিন কত যতœ করে রেধে খাইয়েছি। সাহেব এটা করেছে, সেটা করেছে। পাশের বাড়ীর হিন্দু মেয়েগুলোর গল্প করল। ওদের বাড়ী কল থাকতেও ওরা দু-বোন দুপুরবেলা আমাদের বাড়ীর কল থেকে পানি নেয়। অত বড় ধাড়ী ধাড়ী মেয়েগুলো এ বাড়ীতে এসে গোসল করে ভিজা কাপড়ে বাড়ী ফিরে। রেশমী সবই শুনল, কিছুই বলল না, শুধু মুখ টিপে টিপে হাসল।
আজিম তিন-চারদিন পর ঢাকায় গেল। এ কয়দিন রেশমীর সাথে কেরাম বোর্ড খেলেই চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল আবার আসব চাচী। রেশমী চুপ করে শুনল। রেজা সব সময়ই শুধু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ কাজ ছাড়া মানুষের যে অন্য একটা জগত আছে, তা রেজা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করছে। রেশমীকে নিয়ে একটু বেড়ানো একটু গল্প করা, রেজার এ ধরনের অভ্যাস রেশমী কখনো দেখেনি। মিঠু এখন হাটতে শিখেছে, বেশ লাগে দৌড়ে দৌড়ে হাটে। আধো আধো করে কথা বলে। রেজা কিন্তু এসব খুব লক্ষ্য করে। সে ভাল ভাল জামা কাপড় তৈরী করে এনে দেয় যখনই সে জামা মিঠু গায় দেয়। তাই যেন ওকে চমৎকার মানায়।
সিরজগঞ্জে ওরা সালেহা ইসহাক স্কুলের কাছে থাকত। এক তলা পুরানা একটি বাড়ীতে তারা অবস্থান করত। বাড়ীর পাশেই বাড়ী ওয়ালার বাড়ী, রেশমীর বয়স তখন সতের বছরের কিচু কম বেশী ছিল। পল্টু বুড়ো নামের এক ঘোড়ার গাড়ীর দাড়োয়ান ছিল সে রেশমীদের বাসায় মাঝে মাঝে কাজ করত। পল্টু বুড়ো ভাল বাগানের কাজ করতে পারত। সে শীতের সময় রেশমীর বাসায় সামনে টমেটো, আলু, কপির বাগান তৈরী করে দিয়েছিল।
একটা কথা রেশমীর নাকি প্রায়ই মনে পড়ত। সকলের বাসায় বাগান করছে, মাটি কোপাচ্ছে। তখনো পল্টু বুড়ো ওদের বাগান আরম্ভ করেনি। বাড়ীর ছোট বয় চাকরটাকেও একদিন রাত্রে শিখিয়ে দিয়েছিল বাড়ীর কানুনগো সাহেবের টমেটো গাছ চুরি করে আনতে। কাজের ছেলে যখন চুরি করে টমেটো গাছ নিয়ে রাত্রে রেজার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, রেজা তখন প্রশ্ন করল, এই গাছ কোথা থেকে এনছিলে ? চাকরটা বলল, আম্মা আনতে বলেছে।
রেজা তখনই অফিস রুম থেকে ফিরে এসে রেশমীকে বলল, ঐ গাছ তুমি আনতে বলেছ ? রেশমী বলল হ্যাঁ, কেন তাতে কি হয়েছে ? বাবার কাছে যখন ছিলাম- তখন কত গাছ চুরি করে এনেছি। কত ফুল চুরি করে এনেছি। রেজা বলল, তখন তুমি তোমার বাবার মেয়ে ছিলে- আর এখন তুমি এক জনের স্ত্রী, রেশমী ব্যাপারটা উপলব্ধি করল, কাজটা অন্যায় হয়েছে বুঝতে পারল। তারপর সে কোন দিন আর এমন অন্যায় কাজ করে নাই। (চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।