সর্বশেষঃ

কুড়ি টাহা বেচতি পারলি, তাইদে খাতা-কলম কেনব

‘কুড়ি আটি নাইল আনছি হাটে। কুড়ি টাহা বেচতি পারলি তাইদে কাগজ-কলম কেনব। আব্বারে কিনে দিতি কইছিলাম- কলো স্কুল বন্দ কাগজ কলমের কাম কি।’ মাগুরার মহম্মদপুর। এখানে শাপলার স্থানীয় নাম ‘নাইল’। বলছিল, মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাজারে শাপলা বিক্রি করতে আসা ৯ বছর বয়সের রাব্বি। বললো- ‘গলা পানিতি নামে বিলি যায়ে নাইল উটোয়ে হাটে বেচতি আনছি। এহন পনতু (পর্যন্ত) এক আটিও বেচতি পারিনেই।
রাব্বির কথা শুনে কুড়ি মুঠো শাপলা কুড়ি টাকায় কিনে নেন সদরের আমিনুর রহমান কলেজের প্রভাষক সুতীব্র কুমার সাহা। রাব্বির বাড়ি সদরের পোয়াইল গ্রামে। বাবা কাবুল শেখ দরিদ্র দিনমজুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাব্বি দ্বিতীয়। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাব্বি সদরের লাহুড়িয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
রাব্বি জানায়, দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় তার বাবা শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করতে পাঠান। শাপলা বিক্রি করে তার ১৫ থেকে কুড়ি টাকা হয়। এই টাকার কিছু বাবাকে দেয়, বাকিটা তার কাছে থাকে। টাকা দিয়ে কী করবা ? প্রশ্নের জবাবে রাব্বি জানায়, ‘কলম কাগজ লাগে। আব্বা কিনে দিতি চায়না। বলে স্কুল বন্ধ, কাগজ কলমের কোন দরকার নাই। আবার খিদে লাগলে জমানো টাকা দিয়ে কিছু কিনেও খায় রাব্বি। দেখা হয়ে যায় রাব্বির বাবা কাবুল শেখের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ। জন বেচে খাই। কী করব ভাই। কডা টাকা আয় করতি পারলি উপকার হয়।’
রাব্বির মা বললেন, ‘আমি চাই আমার মনি লেহাপড়া করুক। স্কুল বন্ধ বলে ওর আব্বা নাইল বেচতি পাঠায়।
রাব্বির সব শাপলা কিনে নেওয়া প্রভাষক সুতীব্র কুমার সাহা বলেন, ‘শাপলাগুলো বিক্রি হচ্ছিল না। ছোট মুখটা রোদে পুড়ে কালো হয়েছিল। শাপলাগুলো কিনে কয়েকজন ভাগ করে নিয়েছি।
কথা হয় রাব্বির স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান শরীফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু দারিদ্রতাই প্রধান বাধা। রাব্বিদের পড়ালেখায় ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।