জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর) : মিঠুর বয়ষ ২৫ দিন হওয়ার পর রেশমীর মা খুলনায় চলে গেল। মিঠুকে নিয়ে রেশমী বড় বিব্রত হয়ে পড়ল। ভাল করে খাওয়াতে জানে না। গোসল করাতেও বড় অসুবিধা বোধ করে। তবুও রেশমীর হাতে খড়ি হতে থাকে। মিঠু মাঝে মাঝে বড় কাঁদে। বাসার পাশে এক ভদ্র মহিলা এসে বললেন- পেট কামড়াচ্ছে, পেট সেকতে হবে। আস্তে আস্তে করে মিঠুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে থাকে।
তখন শীতের ওড়না পড়া, কুয়াশা ঢাকা হেমন্তের ঘুম জড়ান চোখে শীত এসে গেল। বিকালে, সকালে সোয়েটার পরে মনে হত ভিনদেশী মানুষের সন্তান। বাসায় একজন বাবুর্চি ও একজন আয়া নিয়েই তাদের সংসার। রেজার একটা মামাত ভাই ও তাদের কাছে থেকে স্কুলে পড়ে। তাকে পড়াবার জন্য একটা কলেজের ছেলে জায়গীর থাকত। রেজা যা বেতন পেত তার অর্ধেকটাই বাড়ীতে চাচার জন্য পাঠাত। মাসের শেষে সংসারে হাত খরচের টাকার সমস্যা হত। শেষ পর্যন্ত বাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে ধার নেওয়া-লাগত। রেজার এক দূর সম্পর্কের চাচাকে মাসে ৫০ টাকা করে খরচ দিতে হত।
এমনি করে টেনে টুনে সংসারটা চলছিল। রেজার কাছে রেশমী প্রায় এক বছর হয় এসেছে। আজ পর্যন্ত রেজা একখানা ভাল কাপড়, এমনকি একখানা গয়নাও গড়িয়ে দেয় নি। বাবার কাছ থেকে রেশমী যা পেয়েছে তা-ই তার সম্বল। মিঠুর বয়স যখন এক বছর হলো, তখন রেশমী মিঠু ও রেজাকে নিয়ে দেশে এল। রেশমীর বাবা ও মা রেশমীকে পেয়ে যেন হাতে স্বর্গ পেল। সবচেয়ে খুশী হল বাবা মিঠুকে দেখে রেশমী বাড়ী যাওয়ার পথে একখানা বিছানা ঝাড়া ঝারু নিয়ে গেল। মা তা দেখে অনেক খুশী হলেন। রেশমী যেন মনটা চেতনা না পেয়ে লজ্জায় মুষড়ে পড়ল। ভাবল বাবা, মা, ভাই বাঁশী ওদের জন্য কিছু আনা উচিত না। রেশমী কি করবে, রেজা কিছুই বলল না। তাছাড়া রেশমী বাজার খরচের টাকা থেকে দীর্ঘ দিন যাবত ২৫ টাকা বাঁচিয়ে রেখেছিল। তাও রেজার হাতে তুলে দিয়েছে।
প্রায় ১ মাস খাবার বাড়ীতে থাকার পর রেশমী রেজার এক চাচার সাথে আবার সিরাজগঞ্জে ফিরে এল। এই চাচাকে রেজা ঢাকায় পড়ার খরচ দেয়। ছেলেটি রেশমীর সম বয়সী হবে। তার নাম ছিল আজিম। সিরাজগঞ্জ তিন চার দিন ছিল। সারা দিন শুধু হৈ-চৈ করে কাটাত। কখন কিরাম খেলত, কখন লুডু খেলত। খেলার সময় সে চাচী আম্মা (রেশমীকে) আহ্বান কতর। আজিম বি.এস.সি’র ছাত্র। এমনি এই দিন চারদিনে আজিমের সাথে কেরাম খেলে রেশমির মনটা যেন চাঙ্গা হয়ে উঠল।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।