সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র ॥ পর্ব-৪১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : অন্ধকার, সেই অন্ধকারেই যেন সে রেজাকে সে নিবিড় করে কাছে পেত। রেজার হাতটা সে নিজের হাতে নিয়ে খেলা করত। আস্তে আস্তে করে কাছে এগিয়ে আসত। নিজের মাথাটা রেজার বুকে রাখত। রেজা কোনদিন রেশমীকে গায়ে পড়ে আদর করত না। কিন্তু রেশমীর যেন গায়ে পড়া আদরটা ভাল লাগত।
কত লোক আসত এই যমুনা নদী পারে। স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনে মাতাল করা গন্ধে বিভোর হয়ে উঠত। শিহরে উঠত বুকের পাজরগুলি। রেশমী হারিয়ে যেত কল্পলোকের স্বপ্নপুরীর মাঝে। নদীর পাড়ে বসে বসে কেউ ভাটিয়ালী গান গাইত। ওহ॥ সে কি করুন মিনতি। কেউ বাঁশি বাজাত। সে কি মধুর সুর। যেন মহুয়ার মাতাল করা আবেশ। সে আবেশে রেশমী যেন ঘুমিয়ে পড়ত। রেজা বলত, অনেক রাত হল, রেশমী ঘরে যেত। আস্তে আস্তে রেশমীর শরীর ভারী হয়ে এল। এখন সে আর নদীর পাড়ে যায় না। বাড়ীতেই থাকে, রান্না করে, রেজাকে নিজের হাতে আদর করে খাওয়ায়, সেলাই করে।
রোযার সময় এসে গেল, ভীষণ শীত। রেজা রোযা রাখে, নামায পরে। রেশমী ইফতারের সময় রেজার জন্য বড় ব্যস্ত। পরে একদিন রাতে রেশমী খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ল। শেষ রাতের দিকে একটা ছেলে হল। ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। মাথা ভরা কালো কোকড়ানো চুল। ছেলে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় রেশমীর তেমন কষ্ট হয় নি। মা এসেছিল, সে কাছে ছিল। লেডি ডাক্তার না আসতেই বাচ্চা হয়ে গেল। মা রেশমীকে খুলনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেখানে বাবা আছেন, রেশমী নিজেই গেল না। কেন যেন রেজার জন্য তার মনটা কেঁদে উঠল। রেশমী মাকে বলল, মা তুমি থাক। রেজা কিন্তু রেশমীকে খুলনায় যাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছিল।
রেশমী তার ছেলের নাম রাখল মিঠু। মিঠুর বড় বড় দু’টো চোখ, মোটা সোটা যেন কোল ভরা ছেলে। রেশমী যেন মনে মনে বড় আনন্দ পেল। মনের গহনে যে কালিমা ছিল, এতদিন পর কে যেন এসে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেল। হাসিতে আনন্দে তার সংসার ভরে উঠল। আবার রেশমীর মনে গান এল। ছেলেকে কোলে করে ঘুম পড়াত আর গান গাইত। আমারে ভালবেসে, আমারি লাগিয়া, সয়েছ কত ব্যথা, বেদনা, অপমান- আমারে ভালবেসে।
রেজাও যেন কেমন বদলে গেল। ছেলেকে সেও যেন ভালবাসে। অফিস থেকে এসে মিঠুর পানে চায়। মিঠু ঘুমায়, ওর গায়ের রংটার সাথে লাল মশারির রংয়ের সাথে মিলে যায়। দিন চলে যায়, মিঠু একটু একটু হাটতে শিখে। এ পাশ ওপাশ হতে শিখে। মিঠু কিন্তু রেশমীর মত হয় নি, ও হয়েছে ওর বাবার মত।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।