সর্বশেষঃ

অস্তিত্বহীন উত্তর পশ্চিম কলাকোপা রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়

দৌলতখানে নেই স্কুলগৃহ ও কার্যক্রম, চলছে অফিস নথিপত্র !

দ্বীপজেলা ভোলার অদূরে দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম কলাকোপা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন অস্তিত্ব ও কার্যক্রম নেই। বিদ্যালয় স্থাপনের যে ঠিকানা দেয়া আছে, সে ঠিকানায় আছে বাগান বাড়ি ও গোয়াল ঘর। অথচ নিয়মিত চলছে অফিসের নথিপত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি কোন এক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের নামে নামমাত্র দলিল থাকলেও নেই জমি। যে ঠিকানায় বিদ্যালয় স্থাপন দেখানো হয়েছে সে ঠিকানায় রয়েছে বাগান বাড়ি ও গোয়াল ঘর। বিদ্যালয়টির নামে নেয়া রেজিঃ দলিল নং-১৪৯৫, তারিখ-০৩/০৯/১৯৯৫ইং, অপর দলিল নং-২৪৯৫, তারিখ-০৯/১১/১৯৯৫ইং। কলাকোপা মৌজার ৩১৪ নং খতিয়ানে জমি দাতার কোনো সম্পত্তি নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে নিজ বিদ্যালয় গৃহ কার্যক্রম না থাকায় অন্য বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনির ডি,আর ভূক্তকরে পরীক্ষা নেয়া হয়, যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। ইতঃপূর্বে দিদার উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে ৩ জন, ২০১৩ সালে উত্তর পূর্ব দক্ষিণ জয়নগর মাতাব্বর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২ জন, ২০১৪ সালে ৩ জন, ২০১৫ সালে ৪জন, ২০১৬ সালে ৩ জন, ২০১৭ সালে ৩ জন, ২০১৮ সালে ৩ জন, ২০১৯ সালে ৪ জন ডি, আর ভূক্ত হয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের ভুয়া নামের তালিকা তৈরী করে বিনামূল্য বিতরনের জন্য সরকারী পুস্তক গ্রহন করে নামমাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে বাকী সকল বই কেজি দরে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে সংশ্লিষ্ট স্কুল সংক্রান্ত তথ্য বিবরণীতে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সহ-শিক্ষক রুনা আক্তার, জান্নাত বেগম, অনিতা রাণী মৃধা এবং এমএলএসএস নাজমা বিগত ০৭/০২/২০০৯ইং তারিখে বিদ্যালয়ে যোগদান করে। বিদ্যালয়ের কোন রকম অস্তিত্ব না থাকায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক, দৌলতখান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হোসেন, সহকারী কমিশনার ভূমি, জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং দৌলতখান উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা রয়েছেন। ওই কমিটি বিগত ১৭ মে ২০১৭ ইং একটি রিপোর্ট পেশ করেন। এতে শিক্ষক-কর্মচারীর নাম তালিকা থাকলেও নেই এমপিও/ইনডেক্স। বিদ্যালয়টির কোড নং-৫০৬০৩০৬২৫৫ উল্লেখ রয়েছে। এ পর্যায়ে স্কুল ভিটি তৈরীর জন্য জমি দেখছেন বলে এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি কয়ছর আহমেদ ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন চাকুরী দেয়ার নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার মহাপরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রাপ্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমানে কোন রেজিষ্ট্রি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে না।
দৌলতখান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হোসেন মিয়া বলেন, স্কুলটির কোন অস্তিত্ব নেই। নেই কোন কার্যক্রম। অফিসে নথিপত্র কিভাবে চলামান রয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ব্যপারে তিনি কিছুই জানেন না।
যেখানে স্কুলগৃহ নেই, নেই শিক্ষা কার্যক্রম, অথচ যাচাই-বছাই কিমিটি কি যাচাই করলেন। এভাবে দুর্নীতি করলে দেশ কোথায় যাবে ? জনমনে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। পুনরায় সুষ্ঠ এবং সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় ও সুশীল সমাজের লোকজন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।