সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৩৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : রেশমীর মা দেশের বাড়ীতে গিয়েছিল, সেখানে তার এক দাদী তার এক নাতনীর জন্য জোনাকীর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। এমনকি তার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে ভাবে হোক এ ছেলেকে মানুষ করে জোনাকীকে বিয়ে দিতে হবে। রেশমীর মা দেশের বাড়ী থেকে ফিরে এসে রেশমীর বাপকে জানালেন এ প্রতিজ্ঞার কথা।
ছেলেটির নাম কাজল। সুন্দর হেংলা চেহারা। বাবা-মা নেই, সে তার মামার কাছে থেকে লেখা পড়া করছে। মামা সামান্য বেতনভুগী একজন কেরানী। ছেলেটা তখন এম.এ পড়ে। মাঝে মাঝে ছুটি পেলে সে জোনাকীদের বাড়ী আসত আর তাকে দেখে জোনাকী ছুটে পালাত। অনেক সময় জোনাকী খেলাঘরে বসে রান্না করত পোলাও, জরদা, কোরমা। জোনাকীদের চাকর, এরাদ আলী গিয়ে বলত ভাইজান বুবু ডাকছে ভাতটার মার গেলে দিতে। কাজল ভাবত সত্যিই বুঝি কাজল বাড়ীর ভিতরে আসত, জোনাকী ছুটে পালাত, কাজল লজ্জা পেয়ে ফিরে যেত।
দুপুরের দিকে রান্না হয়ে গেল, নানী শাড়ী পড়ে নাকে নোলক দিয়ে, পায়ে মল বাজিয়ে কোমড়ে বিছা পড়ে পান খেয়ে ঠোট লাল করে মাজা দুলিয়ে সারা রাস্তা ঘুরে বেড়াত। রাস্তার ছেলে-বুড়ো সকলে তার পিছু লাগত। সকলেই তাকে নিয়ে হাসত। নানীর অনেক গুন ছিল। ভাল রান্না করতে পারত, ভাল পিঠা তৈরী করত, ভাল চুলো তৈরী করতে পারত।
আশ্বিনের পূঁজার ঢোল যখন বাজাত নানীকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না। সেই কয়েক দিন নানী উধাও, নানীর আর পাত্তাই নেই। পূঁজা শেষ হয়ে গেলে আবার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে নানী হেঁসে দুলে আসত। রেশমী তখন নবজন্মা। চল্লিশ দিন হবে। রেশমীর মা আতুর ঘরে। নানী জানি কোথাও ঢোলের বাড়ী শুনে ছিল, সে তখন ধাওয়া করছে তার পিছু, জোনাকীর অল্প সর্দি, জ্বর ছিল তা নিয়ে সে বাবার অফিসের ভাত পাক করল, মায়ের আতুর ঘরের রান্না করে দিল। বিকালের দিকে জোনাকীর খুব জ্বর এল। দু’তিন দিন জ্বরে ভোগার পর ডাক্তার জানাল নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড। সকলেই ব্যস্ত হয়ে উঠল, জ্বর দিন দিন বেড়ে চলল। সাব রেজিষ্ট্রার সাহেব অজ¯্র টাকা খরচ করতে লাগলেন, কিছুতেই কিছু হল না। শেষ পর্যন্ত জোনাকীর কথাও বন্ধ হয়ে গেল। তবুও জোনাকী ইশারায় মাকে ডাকত। বলত নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল পেড়ে মুড়ি দিয়ে খাবে। মার দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরত। মা বলতেন খাবে বৈকি; মা ভাল হয়ে উঠবে।

(চলবে———-)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।