জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৩৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)
(গত সংখ্যার পর) : রেজা ঢাকার মুসলিম হলের ছাত্র। রেজার ছুটিতে আসার সময় হলে রেশমী লুকিয়ে লুকিয়ে রুমালে ফুল তুলে রাখত। রেজা যখন আসত লজ্জায় তার হাতে দিতে পারত না। রেশমী বিয়ের পর খুব নামায পড়ত, রোযা রাখত। সব সময় সে নামায পড়ে পড়ে তার মৃত্যুর জন্য দোয়া করত, মহান ¯্রষ্টার কাছে। এ পৃথিবী থেকে সে চলে যেতে পারলেই সে নিস্কৃতি পায় এত দুঃখ এত কষ্ট তার জীবনে অসহ্য।
বাড়ীর সকলে বেরি বেরি রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ল। রেশমীও বাদ গেল না। রেশমীর হাত-পা ফুলে গেল অল্প অল্প জ্বর, রেশমী নীরবে সকলের পরিচর্যা করে যায়। রেজা তখন বি.এস.সি পরীক্ষা দিবে বলে শশুরের বাসায় থেকেই পড়াশুনা করছে। টাউন থেকে দূরে সাব রেজিষ্ট্রার সাহেব জায়গা কিনে বাড়ী নির্মান করেন। সেখানেই রেজা থাকত, খেত, পড়াশুনা করত।
সকালের নাস্তা ও দুপুরের, রাতের খবার বাবুর্চি ও চাকরেরা খানচায় করে বয়ে নিয়ে যেত। প্রত্যেক দিন খাবারের সাথে সাথে রেশমীর চিঠি পেত, আজ ২-৩ দিন ধরে রেশমীর চিঠি আসে না। রেজা অবাক হয়ে গেল রেশমী কোনদিন চিঠি না লেখে থাকে না। রেজা বিকেলের দিকে টাউনে বেড়াতে এল, শুনতে পেল রেশমীর অসুখ। রেজা বাড়ীর ভিতর গেল, দেখল সাব রেজিষ্ট্রার সাহেব ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে, রেশমী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
যে রেশমীকে কোন দিন ভালবাসতে পারেনি, ঘৃনা তাচ্ছিল্যে, অবজ্ঞা করে তাকিয়েছে, তার জন্য তার হৃদয় যেন কোনখানে সে কষ্ট অনুভব করল। যার মৃত্যু পর্যন্ত সে কামনা করেছিল, আজ তাকে ফিরে পাবার জন্য তার মন তাকে বার বার ভিক্ষা জানাল। কিন্তু রেজা নিশ্চল নিশ্চুপ হয়ে, রেশমীর মুখের পানে তাকিয়ে থাকল। রেশমীর মা রেশমী রেশমী করে পাগল হয়ে গেল, লোকে লোকারন্য। ডাক্তাররা বহু চেষ্টা করছে রেশমীর জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য। সাব রেজিষ্ট্রার সাহেব মেয়ের মুখের পরে বুকের পরে বার বার রেশমীকে ডাকছে। ভদ্র লোকের এর আগে একটি মেয়ে টাইফয়েড জ্বরে আক্তান্ত হয়ে মারা গিয়াছে। তখন তার বিয়ের কথা-বার্তা চলছিল, আশ্বিন মাসে তার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। বিধির বিধান বোঝা বড় কঠিন। ভাদ্র মাসে সে মারা গেল। সে দুঃখ-কষ্ট আজও সাব রেজিষ্ট্রার ও তার স্ত্রীর মনে দাগ কেটে আছে। একমাত্র রেশমী তাও যদি চলে যায়, তাহলে তারা কি নিয়ে থাকবে।
সাব রেজিষ্ট্রার সাহেব যেন স্বপ্ন দেখছিল তার মেয়ে জোনাকীকে নিয়ে। জোনাকী চিল তেমনি সুন্দর, চাঁদকে যেন হার মানিয়ে দিত। কালো ডাগর ডাগর দুটি চোখ, জোড়া ভ্রু, উচু চিকন নাক, রক্তের মত লাল ঠোট দুটি তাকে অপরূপ মনে হতো। চুল ছিল কালো মেঘের মত, একটা বেনী হাটুর কাছে সব সময়ে দুলত। সব সময়ে নেচে নেচে বেড়াত, তার অনেক হাঁস-মুরগী ছিল। পোষা মুরগীদের কান ফুড়িয়ে দুল পড়িয়ে দিত, কেউ তার মুরগী জবাই করতে পারত না।
(চলবে———-)।