সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৩৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : স্বামী যখন তাকে চিঠি দিত সে উত্তরটা পর্যন্ত তাকে দিতে জানত না। বাপ তাকে ডেকে নিয়ে এসে চিঠির ভাষা বলে দিত। তারপর রেশমী নিজেই চিঠি লিখতে পারত। চিঠি লেখার কথা মনে পড়লে আজও রেশমীর হাঁসি পায়। চিঠি লেখা কলমের কালি কিছুটা লাল, কিছুটা কালো, কিছুটা হলুদ এর রূপ হরেক রং দিয়ে চিঠি লিখতে রেশমী আনন্দ পেত। স্বামী যখন যৌবনের উত্তাল তরঙ্গ তুলে সাগরের মত ঢেউ নিয়ে এসে তার কাছে দাঁড়াল সে তখন মরা নদীর সোতার মত আর এক দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকল, এ দোষ কার ? তার না স্বামীর ? না বাপের ? কে দেবে এ প্রশ্নের উত্তর। তাই বলে কি রেশমীর মন ছিল না ?
কিন্তু রূপ ? রূপ রেশমী কোথায় পাবে ? সুন্দর স্বাস্থ্য সে কোথায় পাবে ? এ যে খোদার দান। আল্লাহ তাকে তা দেয়নি। স্বামী লিখেছে, রেশমী আমি চাই এমন একটা মেয়ে যার চুম্বনে গাল ভরে যাবে, আলিঙ্গনে বুক ভরে উঠবে। কিন্তু রেশমী তা তাকে দিতে পারেনি। তাই বলে কি তার যৌবন ছিল না ? ভালবাসা ছিল না ? বাহিরের রূপ দিয়েই কি মানুষেল মনের বিচার হয় ?
চৈত্রের এক সোনাঝরা মাধবী সন্ধ্যায় রেশমীর বিয়ে হয়েছিল। কোন তারিখে, কোন বছর তা রেশমী একদম বলতে পারে না। কতবার করে স্বামীর কাছে জিজ্ঞাসা করে শুনে রেখেছিল, তা রেশমীর একটুও মনে থাকে না। কেউ জানতে চাইলে রেশমী তা বলতে পারে না। মাঝে মাঝে রেশমী বড় লজ্জা পায়, কিন্তু যারা তাকে জিজ্ঞাসা করে তারা জানে না।
এ বিয়ে রেশমী নিজে করেনি। এ বিয়ে বাপ তাকে দিয়েছে, তাতেই বোধ হয় তার মনে থাকে না। তারপর আস্তে আস্তে করে আকাশের ভয়ংকর মেঘ কেটে গেল, সূর্য্য আবার বসুন্ধরাকে আলো দান করল, কখন যে রেশমীর জীবনে যৌবন এসেছিল, আর কখন যে চলে গেল তা আজও রেশমী ভাল করে বলতে পারে না।
তিন বছর সে বাবার কাছে ছিল। তার স্বামী তখন ঢাকায় পড়ছিল। রেশমীর কাছে খেয়াল বশত: তখন চিঠি লিখত, কখনও লিখত না, রেশমী তখন ছেলেমী বয়সের চিঠি লিখলে আনন্দ পেত না, পেলে দুঃখ পেয়ে চুপ করে থাকত। এমনি করে দিনগুলো দুঃখে, কষ্টে, চোখের পানিতে চলে যাচ্ছিল।
রেশমীর বাবা সাব-রেজিষ্ট্রার। কুমিল্লায় তখন তাঁর পোষ্টিং। তার একমাত্র মেয়ে রেশমী জামাইকে লেখাপড়ার খরচ দিয়েছিলেন তিনি। ভদ্র লোক বড় অমায়িক ও শান্ত ছিলেন। তারা ৭-৮ পুরুষ থেকে শিক্ষিত ও বুনিয়াদী ঘর, রেশমী ছোট বেলা থেকেই বড় বুদ্ধিমতি ও দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। সারা ক্লাশের সেরা মেয়ে ছিল। ওরা যখন খুলনায় ছিল, তখন ওর সাথে এক ক্লাশে পড়তাম। তখন ওর বাবা সাব-রেজিষ্ট্রার ছিল। পরে ডিক্ট্রিক সাব-রেজিষ্ট্রার হয়ে বদলী হল। রেশমীর স্বামী রেজা হোসেন তখন রেশমীদের বাড়ী আসা যাওয়া করত। রেশমীর মা ছেলেহীনা ছিল বলে রেজাকে নিজের ছেলের মত আদর করত।
রেজা তখন বি.এ পড়ে। রেজার চাচার রেশমীর বাপের সাথে খুব আলাপ ছিল। সেই প্রথম রেশমীর বাবার কাছে লোক দিয়ে প্রস্তাব দেন, রেশমীর বাবা ইতস্তত: করছিলেন, রেজার বি.এ পাশের পর সাব-রেজিষ্ট্রার সাহেব একটু একটু আলোচনা করতে থাকেন। সাব-রেজিষ্ট্রার সাহেবের নামটা আমার আদৌ মনে নাই। রেজার এম.এ পাসের পর কথাটা দু’দিন থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। রেজাও এগিয়ে এলো। ওদের বিয়ে হলো কিন্তু রেশমী বিয়ের কিছুই উপলব্ধি করতে পারেনি। বার বছরের ছোট মেয়ে বিয়ের সময় রাত অনেক হয়েছিল বলে রেশমী বড় পালংটার উপর ঘুমিয়ে পড়ছিল। শুধু বিয়ের পর ৩ বছর সে বাপের বাড়ীতে ছিল। এই ৩ বছর রেজার যাওয়া আসার ভিতর রেজাকে যতটুকু চিনতে পেরেছে।

(চলবে——)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।