সর্বশেষঃ

পচা ইলিশকে যেভাবে তাজা করেন তারা

ইলিশের দেশেই পচে যাওয়া ইলিশকে অভিনব কায়দায় ‘তাজা ইলিশে’ রূপ দিয়ে চলছে প্রতারণা। আর এই কাজটি হচ্ছে ইলিশের বাড়ি নামে খ্যাত চাঁদপুরে।
জানা যায়, মাছঘাটে আসা দক্ষিণাঞ্চলীয় ইলিশগুলো বিক্রি হয় ৩ ক্যাটাগরিতে। এর মধ্যে তাজা ইলিশগুলো ১নং এবং অপেক্ষাকৃত নরমগুলো ২য় এবং পঁচা ইলিশ বিক্রি হয় ৩নং ক্যাটাগরি অর্থাৎ সবচেয়ে কম দামে। এই পচা ইলিশ লবণজাত করে পরে বিক্রি করা হয়।
এদিকে একশ্রেণির অসাধু মাছ বিক্রেতা ৩নং ক্যাটাগরির এই পচা ইলিশকে এক অভিনব কায়দায় ‘তাজা’ করে প্রতারিত করছে ক্রেতাদের। তারা আড়ত থেকে পাইকারি দরে পচা ইলিশ কিনে তাতে লবণ লাগিয়ে বরফজাত করে। আর লবণের কারণে পচা ইলিশের লালচে রঙ রূপালী হয়ে যায় কিছুটা, আর মাছের পচা শরীরটা হয় শক্ত। এসব মাছ বিভিন্ন শহরের পাড়া মহল্লায় বিক্রি করা হয় তাজা ইলিশ বলে! অথচ এসব ইলিশের খাদ্য গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং বিস্বাদ লাগে।
চাঁদপুর মাছ ঘাটের বাইরে এমন অসাধু কাজ চলে প্রায় প্রতিদিনই। এ অসাধু কাজটি যারা করেন তারা জানান, এই পচা ইলিশগুলো তারা কম দরেই বিক্রি করে থাকেন। কারণ, কমদামে এই ইলিশ ক্রেতারা খুশি হন। কিন্তু বাড়ি গেলে তাদের মাথায় হাত পড়ে।
চাঁদপুর মাছঘাটের আড়তদাররা জানান, ঘাটে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা অপেক্ষাকৃত নরম ইলিশগুলো কম দরে বিক্রি করা হয়। কিছু খুচরা বিক্রেতা সেগুলো ক্রয় করে বরফ এবং লবণ দিয়ে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে থাকে। তবে এটি একবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দু’চারজন খুচরা বিক্রেতা এসব করে থাকে।
চাঁদপুর মৎস বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৎস ব্যবসায়ী শবে বরাত এই প্রতারণায় মাছ বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘হ্যাঁ, এ ধরনের পচা মাছ বিক্রি হয়, তবে আমরা তা বিক্রি করি না। মূল আড়তের আশেপাশে সেটি বিক্রি হয়।’ তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ আছে একটু সস্তায় ইলিশ কিনতে চায়। পরিপক্কটাই ৩-৪ শত টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। যা ঘাটে তাজায় তার তিন গুণ বেশি দাম। এই ইলিশ যারা কেনেন, প্রতারিত হন, সেটি দুঃখজনক।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কিছু ইলিশ লবণ মেখে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতে বিক্রি করি। যাকে লবণ ইলিশ বা লোনা ইলিশ বলে। সেটির জন্য ডিম বের করে আলাদা করা হয়। সেটি উত্তরাঞ্চলের মানুষ পছন্দ করেন। কিন্তু ৩নং গ্রেডের ইলিশ যেভাবে করা হয় তা স্বাস্থ্য সম্মত নয়।’
এদিকে চাঁদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এই পচা লবণ মাখা ইলিশ যা ফেরি করে বিক্রি হয়, তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘যে কোন পচা মাছ বা পচা খাবারই শরীরের জন্য নানা রকম অসুখ ডেকে আনে। বিশেষ করে পেটের অসুখ গুলো হবেই কমবেশ।’
ডা. পীযূষ বলেন, ‘এসবে কোন স্বাস্থ্য সম্মত প্রক্রিয়া মানার কথা যারা বলেন, তারা ভুল বলছেন। পচন বা মুখে নেওয়া অনুপযুক্ত মাছ মানেই, তার আর খাদ্য বা স্বাস্থ্য গুণাগুণ আছে বলে আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, খুব শিগগিরই এসব মাছ বিক্রি বন্ধ করা জরুরি।

সূত্র : https://www.protidinersangbad.com/whole-country/233138

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।