সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : রেশমী : ফাগুনে ফাগুনের ম্লান সন্ধ্যায় জুইয়ের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। বনে বনে পড়ে গেছে সাড়া, বসন্ত এল বুঝি বনে বনে। কতগুলো নাম না জানা পাখি সাঝের আকাশে উড়ে চলছে দেশ হতে দেশান্তরে, দূর হতে দূরান্তরে। ওরা যেন ছুটে যাচ্ছে প্রিয়তমের মিলন আকাংখায়। আকাশের তারাগুলো ঝিক মিক করে হেসে উঠল, হেঁসে উঠল দূরের পাইন গাছটা, আর হেঁসে উঠলাম আমি।
আজই রেশমীর চিঠি পেলাম, চিঠি পেয়ে আশ্চর্য, বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। চিঠিটাকে বার বার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। লেখাগুলো চোখের সামনে দিয়ে নেচে নেচে চলে যাচ্ছিল। পড়তে ও সাহস হচ্ছিল না। এ কিভাবে হয় ? চারদিন পূর্বেইত দেখেছি- ইত্তেফাকে জনৈক ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে নির্দয়ভাবে প্রহার করে বুকে ছোড়া বসিয়ে দিয়েছে। তাতে রেশমী ও তার স্বামীর নাম সুস্পষ্ট কতবার করে ইত্তেফাকের কাগজটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছি, তার শেষ নেই।
এবার চিঠিটার তারিখ খুঁজে দেখলাম, ৮দিন পূর্বে লেখা চিঠি। জরীন, তুই হয়তো স্বামী ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে আছিস, শুনলাম তুই লিখিস, ভাল লিখিস। তোর লেখা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বেরোয়। সমাজে তোর খুব নাম ডাক, তোর লেখা সর্বজন বিধিত। যদি পারিস আমার ব্যত্থাহত জীবনের জন্য একটা গল্প লিখিস। বেচারী লিখেছিল মনের দুঃখ বেদনার কথা, মাঝে মাঝে এমনি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় চিঠি লিখিত।
একটি ফুলের মত মেয়ে সাফল্য ও প্রতিভার যশ মাথায় করে মনি মুক্তা ছড়াতে চেয়েছিল, কিন্তু এ পাষ- তাকে তিলে তিলে পিষে পিষে হত্যা করেছে। তাকে একটু বাঁচতেও দিল না, এই পৃথিবীর রঙ্গ মঞ্চে অভিনয় করে যেতে পারল না। কি দোষ, কি তার অপরাধ, আর সেই মেয়ে হাড়ানো মা-বাপের হা-হাকার আকাশে-বাতাশে গাছের পাতায় পাতায় কেঁদে বেড়াবে যুগ হতে যুগান্তর। আমার দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল চিঠিটাকে বুকে করে ফুলে ফুলে কাঁদলাম, আর এই নলি খামে ভরা চিঠি আসবে না, রেশমীর দুঃখ কষ্টের সংবাদ নিয়ে।
যতটুকু জানি তার বিবাহিত জীবনে মন মলিন্যই তার অশান্তির কারণ, তার শেষ পরিনতি হত্যা। রেশমির রূপ ছিল না, ছিল অসম্ভব গুন। সেই গুন দিয়েই পারল না ঐ ঘাতককে যাদু মন্ত্রে ভুলিয়ে রাখতে। চেষ্টা করেছিল হয়ত অনেক, কিন্তু তার নিয়তি তাকে এগুতে দিল না। সোনার চামচ মুখে করে যে পৃথিবীতে এসেছিল, সে রক্তের সাগর বইয়ে চলে গেল এই পৃথিবী থেকে। একে বলে নিয়তির পরিহাস, ললাটের লিখন।
স্বামীর কথাই বলা যাক, তার স্বামী তাকে কোন দিন ভাল বাসেনি। স্বামী যখন তাকে বিয়ে করে ছিল, তখন রেশমীর বয়স ১২ বছর, আর তার বয়স ২৪ বছর। প্রথম বিয়ে করেই রেশমীকে বলেছিল, হেংলা, রোগা এ বৌকে নিয়ে ঘর করা যায় না। সে দেশ ত্যাগী হবে কাদীয়ানীদের সাথে ধর্ম প্রচার করে বেড়াবে। রেশমী এ সব কথা শুনে কেঁদে ছিল, অনেক কেঁদে ছিল। বাড়ীতে বাবা-মা-ভাই-বোনরা আছে ওরা দেখলে কি ভাববে ? এ জন্য ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদে ছিল। এত কান্না যে তার কোথায় ছিল আজ তা ভেবে দিশা পায় না।
(চলবে—————–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।