এমভি সম্পদ লঞ্চের স্টাফ কর্তৃক ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ

গত ঈদুল আযহার সময় দাদা বাড়িতে ঈদ পালনের উদ্দেশ্যে ঢাকার আশুলিয়া থেকে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী জাহানারা বেগম(১৪) পিতা, হযরত আলী, রাজাপুর ইউনিয়নের মেদুয়া ৭নং ওয়ার্ডে ডাক্তার বাড়িতে আসেন।

গত ২৪ আগস্ট ঈদ পরবর্তী সময়ে দাদা বাড়ি থেকে ভোলার ইলিশা ঘাট হতে এমবি সম্পদ লঞ্চযোগে ফের ঢাকার বাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে লঞ্চে উঠে। তবে পরদিন সকাল অর্থাৎ ২৫ আগস্ট ২০২০ ইং সকালে ঢাকার সদর ঘাট থেকে নিখোঁজ হয় বলে জানায় কিশোরীর পরিবার।

এদিকে অনেক খোঁজাখুঁজি পর কিশোরী জাহানারাকে না পেয়ে মেয়ের বাবা দিনমজুর মো. হযরত আলী তার ঢাকার অস্থায়ী ঠিকানা আশুলিয়া থানায় ২৭ আগস্ট ২০২০ ইং তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

পরে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং এমভি সম্পদ লঞ্চের স্টাফ ও লঞ্চের কিচেনের বাবুর্চি মিরাজ, কাজল ও সিরাজ নামে কিশোরীর বাবাকে ফোন করে এবং তার মেয়ে অক্ষতদেহে রয়েছে বলে জানায়। এবং অপহরকারীদের ঠিকানায় যোগাযোগ করলে তারা আরও জানায়, যদি তার মেয়েকে ফিরে পেতে চায় তাহলে তাদেরকে মোটা অংকের মুক্তিপণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানায় সম্পদ লঞ্চ স্টাফ গংদের এই চক্রটি।

এদিকে কিশোরীর পরিবার গত (৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) ইং তারিখে ভোলার পূর্ব ইলিশার পুলিশ ফাড়ির এ.এস আই সুজন মাঝিকে লঞ্চ স্টাফদের কথোপকথন এর বিষয়টি জানালে এ.এস আই সুজন মাঝি তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত মিরাজ, পিতা-মিজান বিশ্বাস, গ্রাম রামনাথ ৩ নং ওয়ার্ড মেহেন্দিগঞ্জ, জেলা বরিশালকে ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে আটক করে। পরে মামলাটি জটিলতার কারন দেখিয়ে তাহাকে ৫৪ ধারায় আদালতে চালান করা হয়।

এদিকে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও আজও কিশোরী জাহানারার কোন সন্ধান পায়নি তার পরিবারের স্বজনরা। এবিষয়ে কিশোরী বাবা ভোলার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত লঞ্চ স্টাফ মিরাজকে আটক করা হলেও কেন তারা তাকে অপহরণ মামলায় আসামি করেননি ভোলা থানার পুলিশ প্রসাশন। এবং তিনি আরো দাবী করেন তিনি গত ৫সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং তারিখে ভোলা সদর থানায় কিশোরীর পরিবার এজহার দাখিল করতে চাইলেও থানার পুলিশের পক্ষ হতে তাহার মামলা ও ঢাকায় করা তাদের করা অভিযোগের জটিলতা দেখিয়ে ভোলা থানায় কোন মামলা গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন ভোলার থানার পুলিশ।

এব্যাপারে ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এনায়েত হোসেন জানান, যেহেতু অপহরিত হওয়া কিশোরীর বাবা ঢাকায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন সেক্ষেত্রে সেখান থেকেই মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু মামলার কোন ফরোয়ার্ড কপি ভোলা সদর থানায় তারা পাননি সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত আটক হওয়া মিরাজকে ভোলা থানার পুলিশ ৫৪ ধারায় কোর্ট এ চালান করা হয় বলে জানান ভোলা সদর মডেল থানার ওসি।

অপরদিকে উক্ত ঘটনার নিখোঁজ এর বিষয়ে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর ঢাকার আশুলিয়া থানার তদন্ত অফিসার এস.আই ইকবাল হোসেন জানান, যেহেতু কিশোরী নিখোঁজ হয়েছেন ভোলার ইলিশা থেকে সেক্ষেত্রে আমরা যদিও তার বাবার বর্তমান ঠিকানায় অত্র আশুলিয়া থানায় হওয়াতে একটি অভিযোগ গ্রহন করেছি মাত্র, যার অভিযোগ নং ২২০৩। পরে যখন জানতে পারি নিখোঁজ কিশোরী জাহানারা অপহরণ হয় ভোলা ইলিশা থেকে সেক্ষেত্রে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এর পরামর্শে কিশোরী বাবাকে ভোলা থানায় অপহরণ মামলা করতে ভোলায় প্রেরণ করি এবং তার অভিযোগটি আশুলিয়া থানা থেকে উইর্দো করেন বলেও জানান আশুলিয়া থানার পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এবিষয়ে কিশোরীর পিতা, হযরত আলীসহ তাহার পরিবার নিরুপায় হয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা ভুক্তভোগী হয়ে সাংবাদিকদের জানান, যেকোন ভাবেই হোকনা কেন, ভোলার সকল পুলিশ প্রশাসন ও ভোলা জেলা পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় জেলার গণমাধ্যমের কাছে তাহার মেয়েকে অভিযুক্ত ও অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধারের করার জন্য সবার কাছে তারা আইনি সহযোগীতা একান্ত ভাবে কামনা করেন।

উল্লেখ্য কিশোরী জাহানারা অপহরণের পর অভিযুক্তদের সাথে সকল ফোনালাপ ও তাদের জবানবন্দির সকল রেকর্ড নিখোঁজ কিশোরী পরিবারের কাছে রয়েছে বলেও জানান নিখোঁজ জাহানারার পরিবার।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।