মাস্টার মাইন্ড নাসির ফকির ॥ পর্ব-১

রাজাপুরে আতঙ্কের নাম ফকির বাহিনী

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুরের জনমনে আতঙ্কের অপর নাম ফকির বাহিনী। যার নেতৃত্বে রয়েছে ফকির ডন নাসির। এলাকায় ফকির বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ আতঙ্কে থাকেন দিবানিশি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষন মামলার আসামীদেরকেও সাজা কিংবা খালাস দিতে পারেন তাদের নিজস্ব আদালতে। তাতে করে প্রয়োজন হয় শুধু মোটা অঙ্কের কিছু অর্থ। অর্থ আদায় হলে খালাস; আর না হলে তাদের নির্দিস্ট স্থানে নিয়ে অভিনব কায়দায় শারিরীক টর্চার। এলাকায় সামান্যতম স্বামী-স্ত্রীর কথা কাটা কাটির ঘটনা ঘটলে সেখানে কোন পক্ষ তাদের স্মরনাপন্ন না হলেও ফকির বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধরে এনে পানিসমেন্ট করতেও দ্বিধা করেন না, এমন অভিযোগ উঠে একাধিক। তবে তাদের সবচেয়ে বড় বানিজ্য হচ্ছে মাদক কারবারিদের সেল্টার দিয়ে পার্সেন্টিজ কামানো, এমন একাধিক তথ্য মিলে নাম না প্রকাশ করার সর্তে।
সূত্রে আরো জানা যায়, রাজাপুরের ৯নং ওয়ার্ড ও পশ্চিম ইলিশার ৪নং ওয়ার্ডের কোলঘেঁসে রয়েছে মেহেন্দীগঞ্জের ১০ নং আলিমাবাদ ইউনিয়ন। সেখানকার ইয়াবার সম্রাট হাকিম আলি তাদের বড় মাসওয়ারা দাতা বলে সন্ধান মিলেছে। মাসওয়ারা বাবদ হাকিম আলিকে সেল্টার দেন ফকির বাহিনী এমন অভিযোগ রয়েছে একাধিক।
এদিকে এলাকায় কেউ তাদের বাহিনীর বিষয়ে বিরুদ্ধাচারন করলে তাকে মাদক দ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে র‌্যাব কিংবা পুলিশি ভয় দেখিয়ে নিজেরাই তাদের স্বার্থ হাসিল করার মত তথ্য রয়েছে। ইতিপুর্বে এ বাহিনীর ডন নাসির ফকির ও তার এক সহযোগী মিলে এক নারী তাদের অর্থ বানিজ্যের রফাদফা না মানায় গায়ে হাত তুলেন। এ ঘটনায় স্থানীয়, ভিবাগীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকা সহ অনলাই পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি ভোলার পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের নজরে আসলে ঐ নারী আইনের সহযোগীতা নিলে তারা দুজন গ্রেপ্তার হন এবং দির্ঘদিন কারাবাস করেন। কারাগার থেকে জামিনে এসে ডন নাসিরের জেলপার্টনার ও সহযোগি সদস্য সুপথে ফিরে আসলেও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তার অন্য সকল সদস্যরা সহ নাসির ফকির।


জেল থেকে বেরিয়ে এসে অর্থাভাব দেখা দিলে প্রথমেই ২৬ মার্চ ২০১৯ সন্ধ্যায় ফকির বাহিনীর কুট-কৌশলের শিকার হন ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধ দিনমজুর মোহাম্মদ হাওলাদার। তার এ্যাবনর্মাল ছেলে আলি আকবার। ঐ এলাকার শহিদ বেপারির বাড়ির দরজায় দেখতে পেয়ে শহিদের ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে ঝর্না আক্তারের সাথে মিথ্যা অপবাদে আটক করে আলি আকবরকে। আলি আকবরের বড় ভাই ইউসুফের নিকট মুঠোফোনে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে নাসির ফকির। টাকা না দিলে টর্চার করা হয় আলি আকবার সহ তার বৃদ্ধ বাবাকে। টাকার জন্য তাদেরকে তিন দিন সময়ও দেন তারা। সময় অতিক্রম হলে অতঃপর টাকা দিতে না পারায় ৩০ মার্চ ২০১৯ আলি আকবর ও তার বাবাকে জোড়পূর্বক ধরে এনে রাজাপুরের কাজী সিরাজুল ইসলামের অফিসে ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে অপ্রাপ্ত মেয়ের সাথে বিবাহ সম্পন্ন করান ফকির বাহিনী। উল্লেখ্য ঐ বিবাহের কনে পক্ষে স্বাক্ষিরা উভয় ফকির বাহিনীর প্রথম সারির সদস্য বলে জানা যায়। বিয়ের আসর থেকেই বর আলি আকবর উধাও, আজও ফিরেনি সে। তবে ঝর্ণার সাথে দেখা বা শারিরীক সম্পর্ক হয়নি আলি আকবরের এমনটি জানান ঝর্না।
মোহাম্মদ হাওলাদারের উপর বিয়ের দির্ঘ ১৭ মাস পরে এখন আবার হানা দিচ্ছেন ফকির বাহিনী। তারা রাজাপুরের একজন সাবেক মেম্বারের মাধ্যমে মোহাম্মদ হাওলাদারকে বলেন ৩ লক্ষ টাকা দিলে ঝর্নার সাথে তার ছেলের সংসার করা লাগবে না এবং ঝর্নাকে দিয়ে তালাক প্রদান করাবে ফকির বাহিনী। তবে এই কথাগুলো গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত, ফকির বাহিনীর ভয়ে তারা ও প্রকাশে মুখ খুলতে নারাজ।
এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার বলেন, ৩ লক্ষ টাকা দাবি করেছে ঠিক, পরে ২ লক্ষ ৫০ হাজারে এসেছে। সর্বশেষে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিলে তালাক হয়ে যাবে। তবে এ তালাক কিংবা বিয়ের বিষয়ে ঝর্নার বাবা শহিদ বেপারি ও মা সাহিদা বেগমকে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবী ঝর্না আক্তারের।
অপরদিকে ঝর্না বলেন, আমরা এসব কিছু জানিনা। সব কিছু হয়তো মামা খোকন মৃধা জানতে পারেন। তবে আমার সাথে আলি আকবর ফোনে কথা বলে এমনটি জানান ঝর্না, কিন্ত প্রকৃতপক্ষে ঐ নম্বর ব্যাবহার কারী ঝর্নার স্বামী আলি আকবর নয়। এখানেও রয়েছে ফকির বাহিনীর অপ-কৌশল, অনুসন্ধানে সে রহস্যে পরিস্কার হয়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ১৯ জুলাই ২০২০ তারিখ স্থানীয় প্রতিবন্ধী আবুলের ৯ বছরের শিশুকে কবুতর চুরির মত মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আটক করে শারিরীক নির্যাতন করলে অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেন ফকির বাহিনী। এ বিষয়ে ২০জুলাই ২০২০ স্থানীয় গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রতিবন্ধী আবুল ফকির বাহিনীর দ্বারা শারিরীক টর্চার হবে এই ভয়ে কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানা গেছে।
এ বাহিনীর বিষয়ে ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন বলেন, বাহিনীতে ৭৫ জন সদস্য রয়েছে। এদের মধ্যে ডন নাসির ফকির হলেও অন্যতম সদস্যরা কালাম সিকদার, খোকন মৃধা, আনোয়ার গাজী, বিল্লাল হোসেন, রফিক মিজি, নুরু মৃধা, কবির মঞ্জু। এদের দ্বারা অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে রাজাপুরের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁন বলেন, আমি ইতিপুর্বে ওদেরকে জেল থেকে জামিন করিয়েছি ওরা ভাল হবে বলে। এখন আবার এহেন অপকর্মে লিপ্ত থাকার সুনির্দিস্ট প্রমান পাইলে মাননীয় নেতাকে বলে সরাসরি প্রতিকারের ব্যবস্থা নেব।
ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রতন কুমার বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমানসহ অভিযোগ পেলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেব।

প্রিয় পাঠক আমাদের সাথে থাকুন। ফকির বাহিনীর আরো অনেক অজানা তথ্য আমরা প্রকাশ করবো আগামি পর্বে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।