ধ্বংসের মুখে ভোলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ॥ সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মাণ সময়ের দাবী

দ্বীপজেলা ভোলা, এই জেলার চারপাশে নদী। মেঘনা-তেঁতুলিয়া ঘিরে রেখেছে ভোলা শহর, প্রতি বছরই এই মেঘনা-তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গনে নিঃস্ব হচ্ছে ভোলার মানুষ। হারাচ্ছেন পূর্ব পুরুষের স্মৃতি কবরটুকুও, সহায়-সম্পদ হারিয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করে জীবিকার তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
ভোলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার পাওয়ার, এই দাবীতে ঢাকার প্রেসক্লাব, চট্টগ্রামে ও ভোলার মানুষ মানববন্ধন করেছেন। অবশেষে ভোলার মানুষের আপনজন সাবেক সফল মন্ত্রী জননেতা আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি এর উদ্যোগে নদী ভাঙ্গনরোধ হয় সিসি ব্লকের মাধ্যমে। রক্ষা পায় ভোলা শহর।
আজ উন্নত শহরে পরিনত হচ্ছে ভোলা, সিঙ্গাপুুরের আদলে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি। বঙ্গবন্ধুর সাবেক এই রাজনীতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ এর স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল ব্রীজ হলেই ভোলা হবে দেশের মডেল জেলা।


স্বপ্নের ভোলার মানুষের বড় বাঁধা নদী ভাঙ্গনরোধ হলেও দ্বীপজেলার আরেকটি বড় দূর্যোগ বন্যা ও অতি জোয়ারের পানি। যা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের ঘর বাড়ী তলিয়ে যায়, হাস-মুরগী, গবাদিপশু নিয়ে থাকে ঝুঁকির মধ্যে, ধ্বংস হয়ে যায় জমির ফসল, পানির সাথে চলে যায় পুকুরের মাছ নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ কৃষকরা। এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অতি জোয়ার থেকে রক্ষা পেতে সরকার ভোলার নদীর কূল এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়েছেন, যা আজ মানুষের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে দেখবে, আর বলবে ? এমন মানুষেরই অভাব।
সরেজমিনে রবিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোলার বাণী’র একটি টিম রাজাপুর, পূর্ব ইলিশা ও ধনিয়াসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকার মানুষের দূর্ভোগ, কথা হয় ভুক্তভোগী মানুষের সাথে।
পূর্ব ইলিশার ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাজী কান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ হচ্ছে না যেন এক তামাসা চলছে সেখানে। বেড়িবাঁধ এর নামে ঠিকাদারদের বাম্পার হলেও কাজের বেলায় কিছু না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতাদের সামনেই বেড়িবাঁধ কেটে বেড়িবাঁধ দিচ্ছেন ঠিকাদাররা, তারা দর্শকের ভূমিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
দালাদ কান্দি গ্রামের মতলব মাঝি বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফলতির জন্য আমাদের এই বেড়িবাঁধ ছুটে আজ ৪ হাজারের মত মানুষ পানিবন্ধী। আমাদের দূর্ভোগের শেষ নেই, এখন আবার বেড়িবাঁধ দেওয়ার নামে চলছে তামাসা। আমরা টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনী দ্বারা কাজ করার দাবী জানাচ্ছি।
আবদুল হক হাওলাদার বলেন, কাঁদা মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ দিচ্ছেন, এগুলো দিয়ে নাকি সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু উপকার তো হচ্ছে না। আমরা লোক দেখানো বেড়িবাঁধ চাইনা, জননেতা তোফায়েল আহমেদ এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি সেনাবাহিনী দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য।


দক্ষিণ ইলিশার জলিল সরদার বলেন, কাজের কাজ কিছুই হয় না, সব দালালরা লুটেপুটে খায়। আমরা দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই যা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সঠিক কাজ করা হোক।
হনুফা বেগম নামের পানিবন্ধী বলেন, সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না, চাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ।
এদিকে পানিবন্ধী এলাকার মানুষের একটাই দাবী, কি লাভ প্রতি বছর এই বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা শেষ করার ? কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বরং দায়িত্বরত ঠিকাদারদের বাম্পার ফলন। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই, ত্রাণ নয় সেনাবাহিনীর তদারকির মাধ্যমে স্থায়ী বেড়িবাঁধ এর জন্য জননেতা তোফায়েল আহমেদ এর কাছে দাবী জানান তারা।
এদিকে ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সহ দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ছোটন ভোলার বাণীকে বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারনেই আজ এই দশা। আরো আগে যদি মাননীয় নেতার কাছে জানানো হইতো তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না। তবে তিনিও সেনাবাহিনী দ্বারা কাজের মাধ্যমে স্থায়ী বেড়িবাঁধ এর দাবী জানান।
ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছনাইন আহমেদ হাছান মিয়া ভোলার বাণীকে বলেন, পানিবন্ধী ২৫শ মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও ১ হাজার পরিবারকে চাউল দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হবে এবং আমাদের নেতা জননেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি এর মাধ্যমে বাকি জায়গায় সিসি ব্লক এর ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাসানুজ্জামান এর কাছে কাঁদা মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুঠোফোনে তিনি ভোলার বাণীকে বলেন, কথাটি সঠিক নয়; এলাকাবাসীর এ অভিযোগটি ভিত্তিহীন। সেনাবাহিনী দ্বারা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক এলাকারবাসীর এমন প্রস্তাবে আপনাদের মতামত কি ? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তিনি জবাব না দিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।