ভোলায় বেড়ী কেটেই বেড়ী ভরাট !

ভোলার উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান, উচ্চ মাত্রার জোয়ার ও লঘুচাপের কারণে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর শহর রক্ষার প্রায় ৩২০ মিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মধ্যে পড়েছে। তার মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের রামদাসপুর গ্রামের মুরাদ সবুল্লাহ এলাকার প্রায় ৪৫ মিটার বেড়িবাঁধ উচ্চ জোয়ারের চাপে নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অন্য দিকে একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সোনাডাগী এলাকার প্রায় দেরশত মিটার বেড়িবাঁধ সম্পুর্ণ হুমকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয়দের সাথে নিয়ে জরুরিভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হলেও ২ নং ওয়ার্ডের প্রায় দেড়শত মিটার বেড়িবাঁধ, বেড়িবাঁধের মাটি দিয়েই সংস্কারের কাজ করছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ যে সমাজে কোন সময় ধসে পড়া ও জোয়ারের পানিতে ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।

রবিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সোনাডগী বেড়িবাঁধ এর মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধের আপদ কালিন ভরাটের কাজ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্যোগ কালিন ঠিকাদার মিয়া মোঃ সিরাজ এই কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছেন। ভেঙ্গে যাওয়া বেড়ির পাড়ে দুটি ভেকু দিয়ে বেড়ির পাড়ের মাটি কেটেই বেড়ি ভরাট করছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

স্থানীয় মিলন মাঝি (৪০), নবী হোসেন (৪৫), বলেন, গরীবের কেহ নাই, গরীবের আছে আল্লাহ। এলাকার চয়োরম্যান, মেম্বার এহন পর্যন্ত আমগো বানবাসী মাইনষের কোন খোজ খবর নেয় নাই। খায়া আছি না নাখায়া আছি তা দেহনের কোন মানুষ নাই। পেডের ভোক আর রাঁইতে ক্যামনে একটু ঘুম যামু হের চিন্তায় অস্থির, তার উপর আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড’র বাটপারি। আমাগো বেড়ির তলার মাডি কাইটা আবার বেড়ির উপর হালায়। সামনের বৃষ্টি কাডালে আমগো কি হইবো বুঝতে পারছিনা। উপর ওয়ালাগো কাম হইলো আমাগোরে মাইরা হেতেরা কেমনে দুডা টেহা কামাইবো, সারাদিন হেগো এই ধান্দা। আমাগো আছে আল্লাহ, ওগো বিচার আল্লাহ করবো।

একই এলাকার কালাম মাঝি (৪৫), নজির আহামেদ (৬৫), সাহাজল হক (৭২) মোঃ হাসান (৩৮) অভিযোগ করে বলেন, এইযে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধের মাডি কাইট্টা বেড়ি উপরে হালায়। এতে আমাগো জনগনের দুই টিআর উপোকার ও হইবো না। যেকোনো সময় এই বেড়িব ধসে যাইবো না হয় জোয়ারে লইয়া যাইব। এই বেড়িবাঁধের কাজ করার নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা নিজেগো পকোট ভরবে। আমরা স্থানীয়রা এই কাজের প্রতিবাদ করায় হেতেরা আমাগোরে ঠিকাদার ও তার লোকজন চাঁদাবাজির মামলার হুমকি দেয়। আমরা গরীব মানুষ তাই চুপচাপ চায়া আছি। মোগো কিছু বলার নাই।

স্থানীয় মেম্বার কামাল হোসেন বলেন, আমাগো মত মেম্বার দিয়ে জনগনের কোন কামে লাগেনা। আমাগোরে কইলে কোন লাভ হইবেনা। যে যেমনে পাড়ে ধান্দা করবো, জনগনের চিন্তা হেরা কোনদিন করবো না। এই বিষয়ে কোন কথা আমি কইতে পারুমনা, কইলে মাইর খাইতে হইবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার মিয়া সিরাজ বলছেন, আপাতত এই মাটি কাটা ছাড়া আমরা মাটি পাবো কই, তাছাড়া এই বেড়ির সামনে দিয়ে আরেকটি বেড়ি হবে, তাই আপাতত এই ব্যবস্থা। এর মধ্যে যদি আবার জোয়ারে এই বেড়ি ছুটে যায় তাহলে আমরা অন্য বেড়ি তৈরীর ব্যবস্থা করতে হবে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য দুর থেকে মাটি কাটার কোন উপায় নেই। এটা হল আপদ কালিন পন্থা। পরিস্থিতি ভাল হলে আমরা টেকসই বাঁধ করার চেষ্টা করবো। তিনি আরো বলেন, এই অবস্থায় যদি মাটি কেটে বেড়ি ভরাট হয় তাহলে একটু ঝঁকিতো থাকবেই। তার পড়েও দেখি আমরা কি করতে পারি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page