২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ॥ দন্ডিতরা কে কোথায়

দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ১৫ আগস্টের পর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা আরেকটি। ওই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি ছিলেন ৪৯ জন। রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন। মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছে তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে। এ ছাড়া অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের।

দন্ডপ্রাপ্তরা কে কোথায় :
তারেক রহমান : বিগত ১০ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। আর অভিযোগপত্রে তাকে ‘পলাতক’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
লুৎফুজ্জামান বাবর : বিএনপি সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আটক করা হয় বাবরকে। এরপর থেকে কারাগারে আছেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।
আবদুস সালাম পিন্টু : বিএনপি সরকারের আমলে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আবদুস সালাম পিন্টু। এ ছাড়াও সে সময় টাঙ্গাইল জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত।
মুফতি হান্নান : গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামি এবং উগ্র ইসলামপন্থি দল হরকাতুল জিহাদের নেতা ছিলেন তিনি। মূলত তার স্বীকারোক্তিতেই গ্রেনেড হামলা মামলায় মোড় ঘুরে যায় বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। হান্নানের স্বীকারোক্তির পর তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই এ মামলার আসামি করা হয়। ২০১৭ সালেই তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
তাজুল ইসলাম : মাওলানা তাজউদ্দীন হিসেবেই বেশি পরিচিত তাজুল ইসলাম। বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু তার ভাই। গ্রেনেড হামলার পর ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন বলে জানা যায়। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।
হারিছ চৌধুরী : বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশে আসা যাওয়া করছেন।
রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী : বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আটক হন তিনি। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআইয়ের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।
আবদুর রহিম : গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা বা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক। মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম ডিউক : বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। এ মামলায় দীর্ঘ সময় জামিনে থাকলেও এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।
শহুদুল হক : আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশ প্রধান ছিলেন শহুদুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড হয়েছে তার। গ্রেনেড হামলা হওয়ার পর তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্র পক্ষ। কারণ হামলার পর ঘটনাস্থল একবারও পরিদর্শন করেননি তিনি।
আশরাফুল হুদা : গ্রেনেড হামলার সময় মোহাম্মদ আশরাফুল হুদা ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।
খোদাবক্স চৌধুরী : গ্রেনেড হামলার সময় অতিরিক্ত পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন খোদাবক্স চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।
শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ : বিএনপির কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। মামলার অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। ধারণা করা হয়, সৌদি আরবে পলাতক তিনি।
এ টি এম আমিন : বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ শেষ হলে আমেরিকায় চলে যান তিনি। মামলার নথিপত্রে পলাতক দেখানো হয়েছে তাকে।
সাইফুল ইসলাম : বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন।
হানিফ : গ্রেনেড হামলা মামলার আরেক আসামি হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ পলাতক রয়েছেন। রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।