জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৩৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : পাষানের কান্না : ঐশ্বর্যের দম্ভ নিয়ে দাড়িয়ে আছে রাজা দীঘাপতিয়ার রাজমহল। মর্মের মর্ম বেদনায় আজও তারা কাঁদে, আজও তারা হাসে, রানী দীঘাপতিয়ার মত খিল খিল করে। সেই গভীর নিশীথ রাতে পরিখার পারে বাজনা ঘরের বাজনার তালে তালে আজও নর্তকীরা হাত ধরা ধরি করে নাচে। রানী মহল থেকে রাজ মহলে আসার পথটা লাল, নীল, আলোক মালায় জ্বলে উঠে রানী আসার ফপেক্ষায়।
রানী আসে স্বশরীরে নয়, অশরীরি আত্মা নিয়ে। কুমার মহল তেমনি জম-সমাট হয়ে কিন্নর]ীদের নুপুরের তালে। সাবাস সাবাস ধ্বনিতে সচকিত হয়ে উঠে নিস্তব্ধ পুরিটা। কেউ নেই তবুও পূর্ণিমার রাতে সবাই একত্রিত হয়। এটা এখানকার একটা কিংবদন্তী।
রাজা দীঘাপতিয়ার তেমনি আফিমের ঘোরে ঝিমায়। রাজ নর্তকী তেমনি আজও সরাব ঢেলে চম্পাকলির মত হাত দিয়ে মুখের সামনে এগিয়ে দেয়। সবই লোকের কল্পনা, বানানো কথা। বসন্তের পূর্ণিমা রাতে এমনি কল্পনায় ভরে উঠে রাজপুরিটা। সিংহদ্বারের বড় ঘড়িটআ তেমনি ঢং ঢং করে বছরের পর বছর বেজে চলছে। ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই। কালের কপোল তলে, কালের স্মৃতিকে মুছে দিতে চায় না, অতীথকে বর্তমানের মাঝে বেধে রাখতে চায়।
তেমনি নাটোরের মত ছোট্ট একটা মহকুমা। নাটোর থেকে তিন মাইল দুরে এই রাজা দীঘাপাতিয়ার মহল। দু’ধারে ঝাউবীথি এই তিন মাইল রাস্তাকে বয়ে নিয়ে গেছে, মনে হয় ফুলমালি নিজ হাতে ফুলের কেয়ারী করে গেছে। রাজপুরির চারিদিকে ঘিরে আছে বিরাট পরিখা। পরিখার পানি আজও কাকচক্ষুর মত টলটল করে। বিরাট বিস্তীর্ণ বাউন্ডারীটা আজও রাজপুরির জয় ঘোষণা করে। নিস্তব্ধ পুরিটা আম গাছে ভরে আছে। কোনটা রানীর পছন্দ, কোনটা রাজার পছন্দ, কোনটা কুমারের পছন্দ এসব নাম অলংকৃত করে আজও দাড়িয়ে আছে প্রভুভক্ত প্রহরীর মত।
ইটালিয়ান গার্ডেন আজও শোভাবর্ধন করে দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষ্য নিয়ে আজও মনে হয় জীবন্ত। রাজমহলের বাইজিরা এই মাত্র উঠে গেল, পায়ের ছাপ রয়ে গেছে প্রতিটি শিশির ভেজা দুর্বাঘাসে। রং মহলের রূপ ধরে রূপসীরা রূপের নেশায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। আজও খোজে তারা রাজা দীঘাপতিয়ার ও কুমার বাহাদুরকে বিস্মৃতির অতল তলে তারা মরে যেতে চায় না। বেঁচে থাকতে চায় তারা স্মৃতির জগতে।

 

(চলবে————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।