ইতিহাসের মহানায়ক চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর ৪৫ তম শাহাদাত বার্ষিকীর প্রাক্কালে আজও সারাদেশের মানুষ সমান শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, সম্ভ্রানে, আবেগে উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধুর নাম। প্রত্যক্ষ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা পোয়েট অব পলিটিক্স শিরোনামের লেখায় তিনি লিখেছেন, তার মতে, পনেরোই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস নয়, জাতীয় স্মরণ দিবস (National Rememberanccday) হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। তিনি লিখেছেন যে, আমরা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলি, তা হলে বুঝতে হবে, জাতির পিতার মৃত্যু হয় না। তিনি Ref: হিসাবে লিখেছেন, ইংল্যান্ড এর রাজার মৃত্যু হলে বলা হয়- King is dead longlive (রাজার মৃত্যু হয়েছে, রাজা দীর্ঘজীবী হউক)। তিনি লিখেছেন, আমরা বলব, শেখ মুজিবুর রহমান এর মৃত্যু হয়েছে। জাতির পিতার মৃত্যু নেই। সুতরাং তার মৃত্যু দিবসও নেই। পনেরোই আগস্ট তার স্মরণ দিবস। এই দিন জাতি তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তার কর্ম ও সাধনার বিষয় আলোচনার দ্বারা নতুন প্রজন্মকে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা চালাবে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ বলে ছিলেন-

মোরলাগি করিওনা শোক
আমার রয়েছে কর্ম।
আমার রয়েছে বিশ্বলোক।

বিশ্ব কবির মতো বঙ্গবন্ধুরও রয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞের সাফল্য। তার সাফল্য এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাফল্য পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বাঙ্গালীর জাতীরাষ্ট্র স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি বিশ্বের শোষিত মানুষ এর বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। তাই তাকে অভিহিত করা হয় বঙ্গবন্ধু হিসেবে। গফফার চৌধুরীর ভাষায় তিনি শহীদ নন। তার একটি মাত্র অভিধাই হওয়া উচিৎ, চিরঞ্জীব মুজিব হিসাবে। তাই মৃত্যুহীন প্রাণের মৃত্যু নাই। তার মৃত্যু হয় নাই। আমরা শোক করবো কেন ? আমরা তাকে স্মরণ করবো। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করবো। বঙ্গবন্ধু হলেন মৃত্যুহীন প্রাণ।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মৃত্যুহীন প্রাণই তিনি জাতিকে দান করে গিয়েছেন। তা না হলে ১৫ই আগস্ট এর মহাবিপর্যয়ের পর জাতি আবার ঘুরে দাড়াতে পারতো না। সৌভাগ্যক্রমে তার বেঁচে যাওয়া সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহা বিপর্যয় এর পর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারতো না, যদি না বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা ও আশির্বাদ, দোয়া তার উপর না থাকতো। জননেত্রী শেখ হাসিনাই চিরঞ্জিব বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসিক পদক্ষেপে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য। তিনি আজ দেশে, বিদেশে সফল এক রাষ্ট্রনায়ক এর প্রতিচ্ছবি। বিশেষ উল্লেখ্য যে, প্রতিটি জাতির ইতিহাসের কোন না কোন মহানায়ক এর জড়িয়ে আছে। একজন মহানায়ক এর অবির্ভাব ছাড়া পৃথিবীর কোন জাতি-ই তাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে সেই মহানায়ক। শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়। দিগন্ত বিস্তারী এক বিশাল প্রতিষ্ঠান আসমুদ্র হিমাচলসম হৃদয়ের অধিকারী এই মহান মানুষটি তার নিঃশর্ত ত্যাগের মহিমায় সমগ্র বাঙ্গালী জাতির আশা আকাঙ্খার মুর্ত প্রতিক হয়ে উঠেছিলেন। তার দুরদর্শী নেতৃত্ব, প্রশ্নহীন দেশ প্রেম আর অনমনিয় দৃঢ়তায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক নতুন ইতিহাস।
১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে বলে ছিলেন, আমি হিমালয় পর্বত দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির ইতিহাসে স্বপ্ন পুরুষ। বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলার এবং বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন। আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাঙ্গালী জাতির নেতৃত্বের শুন্যতাই কেবল পুরন করেন নাই, তিনি জাতির পিতার অসমাপ্ত কর্তব্য সম্পন্ন করার সংগ্রামে বারবার জীবনের ঝুকি নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
১৯৭৫ এর আগষ্টে যা ঘটেছিল তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি কক্ষচ্যুত হয়েছিল। সেই কক্ষচ্যুতি নিদারুন ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছে আমাদের জাতির জীবনে। রাজনীতির দুরবৃত্তায়ন রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। জাতীয় জীবনের সকল স্তরে তার বিস্তার ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রয়াসে, প্রায়শই হুশিয়ার করতে হচ্ছে, কোন দুর্নীতির পথে কেউ যেন পা না বাড়ান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের উপর সব সময় আস্থা রেখেছিলেন। জনগণই ছিল তার শক্তির উৎস। তাই চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাঙ্গালির জাতির কাঙ্খিত মুক্তির প্রধানতম পথ।

* কিছু অংশ লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর পোয়েট অব পলিটিক্স থেকে অনুদিত।

 

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।