ভোলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মহিষ মোটাতাজাকরণ

গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও লাভজনক উপায়। কারন আমাদের মাংসের চাহিদা প্রচুর কিন্তু সেই তুলনায় উৎপাদন অনেকাংশেই কম। তাছাড়া কোরবানির সময় গবাদিপশুর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই কোরবানিকে সামনে রেখেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পশুকে মোটাতাজা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এছাড়া গবাদিপশু মোটাতাজা করার সাথে কর্মসংস্থান, গোবর উৎপাদন, পরিবেশ উন্নয়নসহ নানাবিধ কিছু জড়িত। বিগত কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পশু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় দেশে গবাদিপশু মোটাতাজা করার পদ্ধতি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা আমাদের দেশিয় অর্থনীতি তথা প্রাণিস¤পদের জন্য আশা জাগানিয়া খবর। তবে গবাদিপশুর মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ সচরাচর দেখা গেলেও মহিষের ক্ষেত্রে এটা নতুন বললে ভুল হবে না। আর মহিষ মোটাতাজা করার এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরাসরি এগিয়ে এসেছে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)।
পিকেএসএফ ও ইফাদের অর্থায়নে পেইজ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) দুবছর আগে প্রাথমিকভাবে মহিষ ফ্যাটেনিং পদ্ধতি শুরু করেছিল। প্রাথমিকভাবে ১০ জন খামারি এই ফ্যাটেনিং কার্যক্রম শুরু করলেও এবছর ৬০-৬৫ জন খামারি ২৫০-৩০০ মহিষ মোটাতাজা করেছে। মোটাতাজা করার সময় তারা সংস্থার ভেটেরিনারি ডাক্তারদের পরামর্শে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা অল্প সময়ে দ্রুত মাংস পেশি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র খাদ্য (ইউএমএস) প্রযুক্তি, ইউরিয়া ট্রিটেড স্ট্র (ইউটিএস) প্রযুক্তি, সাইলেজ খাদ্য প্রযুক্তি, শৈবাল ব্যবহার প্রযুক্তি ইত্যাদি। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে খামারিরা আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে মহিষের মাংসের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্টরয়েড ব্যবহার করে রাতারাতি পশু মোটাতাজা করার অসদুপায় আজকাল আর দেখা যাচ্ছে না। স্বল্পসময়ের এ প্রযুক্তি হাতে নিয়ে প্রথম বছর প্রত্যেক খামারি চার মাসে গড়ে ৪৩০০০ টাকা করে মুনাফা পেলেও বর্তমানে তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কথা হয় চরফ্যাশনের এক খামারি মোস্তফা হাওলাদারের সাথে। তিনি ৩ মাস আগে ৭৬০০০ টাকা দিয়ে পটুয়াখালীর কালাইয়া থেকে দুটি মহিষ ক্রয় করে মোটাতাজা করা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে সেগুলোর বাজার মূল্য ১৬০০০০ এর বেশি। তিনি বলেন, কোরবানিতে মহিষের চাহিদা বৃদ্ধি ও অল্পসময়ে বেশি লাভ দেখে এবছর অনেকেই মহিষ মোটাতাজা করেছে। এসব মোটাতাজাকৃত মহিষ স্থানীয় লোকজন ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তাই মানুষ দিন দিন মহিষ মোটাতাজা করার জন্য আগ্রহী হচ্ছে। কখনো এসব মহিষ ক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া, হাটহাজারি, সাতকানিয়া থেকেও লোকজন যোগাযোগ করছে।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার উপ-পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা নিরাপদ মহিষের মাংস উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে সর্বদা খামারিদের সাথে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ফলে অল্প কিছুদিনেই মহিষের মাংস মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মহিষের মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণের বিভিন্ন চ্যানেল তৈরি হওয়ায় মহিষ মোটাতাজাকরণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এজন্য আমি পিকেএসএফ কে ধন্যবাদ জানাই কারন তাদের দিক নির্দেশনার মাধ্যমেই প্রথম মহিষ মোটাতাজা করার উদ্যোগ নেয়া হয়।”
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, “মহিষের মাংস বাজারজাতকরণের এখন সময় এসেছে, আমরা এটা নিয়ে বৃহদাকারে কাজ করতে চাই। আমরা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারই নয় বিদেশেও কীভাবে সহজে রপ্তানি করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছি। এসব নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য পিকেএসএফ বিগত দিনেও আমাদের সাথে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আশা করছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।