মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লা মিয়ার সনদ কী অধরাই থেকে যাবে ?

আতিকউল্লাহ মিয়া যিনি শুধু নামেই পরিচিত নন, গুনেও গুনান্বিত। তার হাসি-আনন্দ, ভালবাসা মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তার দুস্টমিকে মানুষ সাদরে গ্রহণ করে। তার চাল-চলন, পোষাক, কথাবার্তা এবং ব্যক্তিত্ব ছিল ইর্শ্বান্বিত। যার সাথে কোন ব্যক্তি একবার কথা বললে দ্বিতীয়বার নিজ থেকেই কথা বলতে ইচ্ছে করত। তিনি লেখা-পড়ায়ও ছিলেন সু-শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি ছিলেন বহু গুনে গুনান্বিত একজন অসাধারন প্রতিভাবান মানুষ।


পাঠক আতিকউল্লাহ মিয়া আপনার আমার সকলের সু-পরিচিত ছিলেন। ছিলেন বনেদি পরিবারের সন্তান। তিনি ভোলা শহর তলির ধনিয়ার আশ্রাফ আলী পন্ডিত বাড়ীর আব্দুল লতিফ মোক্তারের জেষ্ঠ্য সন্তান। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অভিভাবক। নদী ভাঙ্গার আগেই ভোলা শহরের গাজীপুর রোডে বাড়ী করেন। শহরের ব্যস্ততম চকবাজারে ছিল বিখ্যাত কাপড়ের ব্যবসা।


আতিকুউল্লা মিয়া মুক্তিযুদ্ধের ডাক শুনে ঘরে থাকতে পারেননি। মা-বাবা-ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন এবং জীবনকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশ ও দশের কথা ভেবে যুদ্ধে চলে যান। ভোলা জেলার হাইকমান্ডার সিদ্দিক সাহেবের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। রানাঙ্গনেও তিনি ছিলেন সকলের প্রিয়। যুদ্ধ শেষ হলে আবার তার কর্মস্থলে ফিরে আসেন। মহান এ মানুষটি ১৯৮৯ সালে সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।


পাঠক আতিকউল্লা মিয়া মৃত্যু অবধি মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেখে যেতে পারেননি। তার সহযোদ্ধা সকলেই সনদ পান, শুধু পাননি আতিকউল্লা। কেন ? কি জন্য ? কি কারণে ? সদন পাননি সেই রহস্য অথরাই থেকে গেল।
তার মৃত্যুর পর তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, মা-ভাই-বোন হয়ে যান আতিক শূন্য। তার স্ত্রী টেনশনে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাকে একাধিকবার ভারতে নিয়েও চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তাতে পরিবার আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ যদি আতিকউল্লা মিয়ার সদন (মুক্তিযোদ্ধা) থাকত, হয়ত তার সন্তানরা এটাকে নিয়েই বেঁচে থাকত।


১৯৯৪ সালে তার নাম গেজেট-এ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পরও আজো তার সনদ হয়নি। অথচ ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দোস্ত মাহমুদ, উপজেলা কমান্ডার অহিদুর রহমান, সহযোদ্ধা মজিবুর রহমান (সহকারী কমান্ডার অর্থ), মিয়া মোহাম্মদ শাহজাহান (সহযোদ্ধা) কার্যকরী সদস্য ভোলা জেলা ইউনিট কমান্ড, আব্দুল খালেক (সহযোদ্ধা) সহকারী কমান্ডার তথ্য এরা সকলে মিলে সুপারিশ ও যাচাই-বাছাই করার পরও আতিকউল্লা মিয়ার নামে সনদ হয়নি। কেনই বা হয়নি এটাই আজ তার সহকর্মীদের প্রশ্ন ?


যেখানে হাজার হাজার ব্যক্তির নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের অভিযোগ আছে, মুক্তিযোদ্ধা না করেই হয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা নেতা, যদিও সরকার এদের বিরুদ্ধে (অবস্থান নিয়েছেন), কিন্তু রনাঙ্গনে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের অনেকেরই আজ সনদ নেই, সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। তাদের মতই আজ আতিকউল্লা মিয়ার পরিবার।


তার বড় ছেলে রেজাউল আলম মুন্না বলেন, দেশের অভিভাবক, অসহায় নিপীড়ন মুক্তিযোদ্ধা সনদ দানকারী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ আমার বাবা যদি মুক্তিযুদ্ধ করে থাকে তা হলে আমার বাবাকে সনদ দিতে হবে। আর যদি যুদ্ধ না করে থাকে, তাহলে সনদের প্রতি আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোন দাবী নেই। আমরা আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছি। বাবা জীবিত থাকলে হয়ত এমন অসুবিধায় পড়তাম না। এমনকি আমার চাচারাও কেহ জীবিত নেই।
মুন্না আরো বলেন, আমি এখন উপরে আল্লাহ, আর নীচে আপনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বিশ্বাস তদন্ত সাপেক্ষে আপনি আমার বাবার নামে সনদের ব্যবস্থা করবেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, আমি যাতে আমার অসুস্থ্য মাকে সেবা-যতœ করে মৃত্যু পর্যন্ত থাকতে পারি।
পাঠক এমন অনেক আতিকউল্লা মিয়া আছে আমাদের চারপাশে। যারা সম্মুখ যুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকেরই হাতে মেজর জলিলে সনদ আছে। অনেকেরই আবার কিছুই নেই। কিন্তু হাজারো স্বাক্ষী আছে, তারাও আজ বাদ পড়েছেন।

অথচ যুদ্ধ করেননি, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বন্ধু বা তাদের সামনে দিয়ে হাটা-চলা করেছেন বা তাদেরকে কিছু খাওয়াইয়াছেন, কারো কারো বাড়ীতে লজিং ছিলেন, ওইসব লোকেরাও আজ সনদ নিয়ে সমাজে বহাল তবিয়েতে আছেন। যদিও এইসব হাইব্রীড মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাহাড় পরিমান অভিযোগ আছে, কিন্তু সরকারও এদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, অচিরেই এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাকে বাদ দিবেন ? যিনি বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেন তাকে, নাকি জয় বাংলা বলেন তাকে ? নাকি যিনি চামচামি বা তেষামোদ এবং তেলবাজী করতে পারেন তাদেরকে ? আমরা চাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই হবে দেশের সূর্য সন্তান। ভুয়াদের মুখ উন্মুচন হোক, বেরিয়ে আসুক রনাঙ্গনের প্রকৃত যোদ্ধারা।
এভাবেই খোরশেদ আলম আতিকউল্লাসহ রনাঙ্গনের প্রকৃত যোদ্ধারাই সনদ পাক। আর তাদের পরিবার-পরিজন মাথা উচু করে সমাজে সন্মানের সহিত বেঁচে থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।