একটি নতুন পৃথিবীর আলোর প্রত্যাশা

মহামারীকে কেন্দ্র করে অচলায়তন পৃথিবী, একটা নতুন পৃথিবী গড়ার তাগিদ, একটা ভালো পৃথিবী- যেখানে মানুষ এর মধ্যে থাকবেনা আর বৈশম্য। যেখানে মানুষ এর মধ্যে থাকবে সব মর্যাদা ও সম্মানবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ।
সেই পৃথিবী গড়ার লক্ষে- আমরা জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় বিধস্ত বিশ্ব মানব জাতীর কাঙ্খিত জয় নিশ্চিত করতে পারে নাই, বরং যুদ্ধ পরবর্তী হানা-হানি দুরবিক্ষ লেগেই ছিল বিশ্বব্যাপী। কিন্তু স্তব্ধ করে দিতে পারে নাই বিশ্ব জনপদকে। যেটা সম্ভব করেছে এই প্রাকৃতিক শক্তি করোনা মহামারি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে লক ডাউনের ফলে যেন একটা শুনসান নিরবতা নেমে এসেছে বিশ্বব্যাপী। সমগ্র বিশ্বের বিমান বন্দরগুলিতে বিমান এর আওয়াজ নেই। রাস্তায় গাড়ীর অনবরত হর্ন বাজে না, শপিংমহলগুলিতে নেই মানুষ এর কল-কাকলি, পার্কগুলিতে নেই মানুষের উৎসব এর আমেজ, সবকিছু যেন স্তব্ধ। শুধু হাসপাতালগুলিতে দৌড়াচ্ছে মানুষ, বাঁচতে হবে এই আশায়। এমতাবস্থায় এই সংকট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বব্যাপী সমন্বিত নেই কোন উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা। এই মহামারী সংকট সকল জাতী ও জনগণের মধ্যে যেন কবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংকট আক্রান্ত এর ক্ষেত্রে কে ধনী কে গরীব তার কোন বাদ বিচার নেই। এই সংকট মানবিকতার এক মহা সংকট, আক্রান্ত ব্যক্তির ধারে কাছে যেন কেউ নেই। কি ছেলে, কি মেয়ে বা স্ত্রী, সবাই যেন নিজে বাঁচি ভাবনায় বিভোর। এমন এক পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বব্যাপী এক নতুন উপলব্ধি তৈয়ার করা প্রয়োজন, যা হবে সম্পূর্ণ এক মানবিক পৃথিবী। সংকটকালে ব্যক্তি জীবনে গচ্ছিত সম্পদ ব্যবহার করতে না পারলে তা মূল্যহীন হয়ে যায়।
সম্পদ এর আয় বৈশম্য এর ক্ষেত্রে তৈরী করতে হবে মানবিক সম বন্টন ব্যবস্থার এক নতুন অর্থনৈতিক নীতি। যাতে করে সংকট কালে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র মিলে মোকাবেলা করতে পারে যে কোন প্রকার দুর্যোগকে। এর জন্য প্রয়োজন সমগ্রজাতী মিলে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণ এর প্রচেষ্টা করার। যাতে থাকবে সকল মানুষ এর জন্য কর্মসংস্থানসহ ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার অঙ্গিকার।
আমরা জানি ১৯২৯-৪০ এর বিশ্বব্যাপী আর্থিক মহা মন্দার আতঙ্কের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দেড় দশকের মধ্যেই ১৯৪৫-১৯৬০ মন্দা কাটিয়ে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৪০ এ ২ লক্ষ কোটি ডলার থেকে ১০ বছরে বেড়ে হয় তিন লক্ষ কোটি এবং ১৯৬০ পৌছে সেই অংক ৫ লক্ষ কোটিতে। এই সমৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন উৎস্য ছিল। বিভিন্ন দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এর বিনিময় মুদ্রা হিসাবে ইউএস ডলার একক মুদ্রা হিসাবে প্রচলিত হয়ে যায়। ৭০ এর দশকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির ফলে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে জি-১০ ভূক্ত দেশগুলি অর্থনীতির পরশক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু করোনা মহামারী সংক্রমনে আক্তান্ত হওয়ার ফলে উক্ত দেশগুলি বিধস্ত দেশে পরিণত হয়। স্বাস্থ্য সেবা খাতে তাদের দুর্বলতা প্রকট ভাবে ধরা পরে। যার ফলে আজ সময় এসেছে বিশ্বের সমগ্র জনগোষ্ঠিকে রক্ষা করার জন্য উন্নত পরাশক্তি সহ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নগামী দেশ সমূহকে নিয়ে বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
মানুষের প্রয়োজনে দেশ ও রাষ্ট্র সমূহকে সামগ্রীক পরিকল্পনাকে মুল চাহিদার উপর ভিত্তি করে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশ্বের মহা মন্দার সময় যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইকোনমিক ডিল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুল অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল, তেমনি করে সমগ্র দেশ সমূহের মানুষ এর কল্যাণে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি, এই স্লোগান এর ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী নিউ ইকোনমিক ডিল প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সমগ্র রাষ্ট্র সমূহ এর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত : অর্থনীতি হবে মানব কল্যাণের জন্য সুসম ভিত্তিক বন্টনমূলক অর্থনীতি। এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ এর মধ্যে সম্পদ এর আয় বৈশম্য নির্ধারন করে দিতে হবে। ব্যক্তি বা সংস্থার উদ্ধৃত্ত আয় রাষ্ট্রের ফান্ডে জমা প্রদান করতে হবে। বিকল্প হিসাবে প্রত্যেক এন্টার প্রেনার কর্পোরেট সংস্থাসমূহ এর আয়ের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক কর্মকান্ডে প্রকাশ্যে ব্যয় করতে হবে। যা কররেয়াত এর অন্তরর্ভূক্ত থাকবে।
দ্বিতীয়ত : বিশ্বব্যাপী নিউক্লিয়ার অস্ত্রবাদীকে বন্ধ করতে হবে। এর পিছনে যে ব্যয় হয় তা মানব কল্যাণে, মানব জাতীকে রক্ষার জন্য পরিকল্পিত ভাবে ব্যয় করতে হবে। সমস্ত পরাশক্তি একত্রিত হয়ে আনবিক অস্ত্র তৈরী ও পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। মওজুদ পারমানবিক অস্ত্র ধ্বংস অথবা নিউট্রালাইজ করে ফেলতে হবে।
তৃতীয়ত : মানবজাতি ও বিশ্বব্রমান্ডকে রক্ষার জন্য পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থত : সারা পৃথিবীব্যাপী অস্ত্রবাজীর ব্যবসা বন্ধ করে এতে বিনিয়োগকৃত অর্থ মানব কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।
পঞ্চমত : মুল পরিকল্পনার কোন কর্মহীন মানুষ থাকবে না।
ষষ্ঠত : পৃথিবীর সকল জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা থাকবে অবারিত বা মুক্ত।
সপ্তম : প্রত্যেক মানুষ এর জন্য খাদ্য যোগান নিশ্চিত এর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অষ্টম : প্রত্যেক মানুষ এর জন্য আবাসস্থল এর নিশ্চিত করতে হবে।
নবম : পৃথিবীর সকল প্রাকৃতিক সম্পদ এর উপর প্রত্যেক মানুষ এর সমান অধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কর্মকান্ডকে মানুষ এর চাহিদা ভিত্তিক ভাবে সাজাতে হবে।

উপরোক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী নিউ ইকোনমিক ডিল বাস্তবায়ন এর জন্য সকল রাষ্ট্রসমূহকে এক করতে পারলে আগামী পৃথিবীর মানুষ একটি নতুন পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে। এরই আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এর অধিবেশনে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে আশা করি।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।