কালীগঞ্জে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত ডরপ’র ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
মায়ের দোয়াতেই আমার স্বপ্ন পূরণ

বাবা-মা বোঝ নয়, সম্পদ। তার প্রমাণ আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান। এই দুনিয়ার বুকে যে সব মানুষগুলো বাবা-মায়ের খেদমত করতে পেরেছেন, দোয়া নিতে পেরেছেন, তারাই বিশ্ব জয় করেছেন। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন। হয়েছেন মহামানব।
পৃথিবী সৃষ্টির লগ্ন থেকে পীর মাশায়েখ, ওলী-দরবেশ, বাদশাহ, নেতা, সমাজপতি, শিল্পপতি, জ্ঞানী-পন্ডিত, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন তারা কোন না কোন ভাবে বাবা-মাকে আদর-যতœ, খেদমত করেছেন, ভালবেসেছেন এবং তাদেরকে পাশে রেখে সব সময় খুশি করেছেন।
অন্যদিকে যারা বাবা-মাকে কাছে পেয়েও তাদের ভালবাসা পাননি, আদর-যতœ, খেদমত করতে পারেন নি, ইচ্ছে করে তাদেরকে দূরে রেখেন, এমনকি বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছেন, তাহারা কোন ভাবেই সফল হতে পারেন নি। যদিও বা কেহ হয়েছেন, তা সাময়িক।
প্রিয় পাঠক বাবা-মা বোঝা নয়, সম্পদ এই শ্লোগানের তাৎপর্য বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়ে এবং সমাজকে বোঝানোর জন্য আমরা বাবা-মা প্রেমী ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরব।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ এমন একজন মহান ব্যক্তির কথা বলব যিনি দু’চোখ দিয়ে তার জন্মদাতা বাবাকে দেখেননি, শুনেননি বাবা নামের শব্দটি, খুজে পান নি তার কোন অস্তিত্ব। হয়তো ছবি থাকলে কোন না কোন ভাবে তার প্রতি ভালবাসা ও আবেগ সৃষ্টি হতো। সেই ছবিটিও আজো পাননি।
কেমন ছিল তার বাবা। কালো না সাদা, লম্বা না বেটে কিছুই জানেন না। তার বাবা যখন মারা যান তখন তিনি তার মায়ের গর্ভে। তার বাবা মারা যাওয়ার দুই থেকে তিন মাস পর তিনি পৃথিবীর আলো দেখেন। তিনি হলেন ভোলা শহরের চক বাজারের গুরপট্টি তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আজাহার মিয়ার একমাত্র ছেলে মরহুম মহিউদ্দিন হারুনের ছেলে মাইনুদ্দিন সাদ। যিনি ৩৮ তম বিসিএসএ কৃষি বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ভোলা পাখিরপোল নিবাসী মরহুম আজাহার মিয়ার আট মেয়ে ও এক ছেলে। সাদ সেই ছেলেরই সন্তান। মরহুম মহিউদ্দিন হারুনের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সাদ বলেন, আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার মায়ের বয়স ২৩ বছর। মা আমাকে এবং আমার বোনকে বুকে জরিয়ে এতগুলো বছর অতিবাহিত করেন। মাকে তার স্বজনরা বিয়ে দেয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু মা ছিল অনড়।
তিনি বলতেন, সন্তানই আমার জীবন, সন্তানই আমার স্বপ্ন। আমার জানামতে মা কোনদিন তাহাজ্জুদ নামাজ বাদ দেননি। সব সময় দোয়া করতেন আমি যেন মানুষ হতে পারি। তার দৃষ্টির বাহিরে আমি কোন দিন যেতে পারিনি। তার দোয়া আমার মাথার উপর ছায়ার মত থাকতো। আমি আমার মায়ের দোয়াতেই ৩৮ তম বিসিএস-এ এগ্রিকালচার (কৃষি)-তে উত্তীর্থ হয়েছি। যদিও আরো দুইবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি তবে, ৪০ তম রিটেন আরো ভালো হয়েছে। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এ চাকুরী করছি।
তিনি বলেন, আমি ক্লাস ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারী স্কুলে পড়ালেখা করেছি, বৃত্তিও পেয়েছি। আমার ৮ ফুফুর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ফুফু আমাকে খুব ভালবাসত। আমার ফুফা আরও ভালবাসতেন। আমার ফুফু আমাকে নবম শ্রেণীতে ঢাকায় এনে একে হাই স্কুলে ভর্তি করান। সেখান থেকে এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাশ করে পরবর্তীতে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাষ্টার্স ফাস্টক্লাশ পাই।
আমার মা বলত তুমি পড়ালেখা চালিয়ে যাও একদিন না একদিন বিসিএসএ টিকবেই। আমি মায়ের এই দোয়া নিয়েই লেখা পড়া করেছি, পাশও করেছি। কিন্তু সব সময় মনে হতো মায়ের এই দোয়ার শক্তিতে আমি বিসিএসএ টিকবো।
সাদ আরো বলেন, আমরা বন্ধুরা আড্ডা দিতাম, পড়াশোনাও করতাম। আমি যখন হলে সিট পাই, তখন ফুফা ও ফুফুকে বলে হলে চলে আসি। কিন্তু আমার ফুফা আমাকে বাবার মত ভালবাসত। আমি মাঝে-মধ্যে টিউশনি করে আমার খরচ চালাতাম।
এক প্রসঙ্গে সাদ বলেন, পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, বাবা-মা, শিক্ষক এবং আত্মীয়-স্বজনের দোয়াতেই সাফল্য আসবে। আমার মাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন, তাকে নিয়েই মৃত্যু পর্যন্ত থাকতে চাই। আমার এই পরিশ্রম-কষ্টের সাফল্য আমার মাকে উৎসর্গ করলাম।