সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২৯

ড, তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), কুসুম ইরান যাবার জন্য মেডিকেল চেকআপ করতে গেল। শরীর ক্লান্তিতে, শ্রান্তিতে, অবসন্নে এলিয়ে পড়তে চায়। দিন দিন তার শরীর ক্ষীণ হতে থাকে। চেকআপ করতে ধরা পড়ল, কুসুমের লান্স-এ পানি জমে গেছে। বাবা বড় ডাক্তার, বাবার কাছে এসে জানাল। বাবা সি.এম.এস.এ ভর্তি করে দিলেন। অনেক কষ্টে সিট পেলেন। ডাক্তাররা পানি বের করে ভিতরে ঔষধ ঢুকিয়ে দিল। পানি আর কমে না, শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। কুসুম বাবার সাথে আলাপ করে ইরান মেডিকেল কলেজে কিছুদিনের ছুটি চেয়ে নিল।
ডাক্তাররা প্রমাদ গুলন। মিষ্টার খান একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। সি.এস.এস.এ বিদেশী ডাক্তার সহ বোর্ড বসল। সিদ্ধান্ত হলো কুসুমের পেট অপারেশন করার জন্য। একদিন পর অপারেশন হলো, মিসেস খান চিৎকার করে কেঁদে মিস্টার খানকে জানান, মেয়েকে বুঝি আর বাঁচাতে পারব না। মিস্টার খান একজন ডাক্তার। সে দেখল তার মেয়ের ওভারিতে টিউমার তার থেকে স্টমাক পর্যন্ত ক্যান্সারে ছেয়ে গেছে। তারা দু’জনই ভেঙ্গে পড়লেন। মেয়েকে সি.এম.এস.এ ক’দিন অক্সিজেনের মাধ্যমে রাখলেন। মিস্টার খান ও মিসেস খান সিদ্ধান্ত নেন, তারা মেয়েকে ব্যাংককে নিয়ে যাবেন। তবু দু’চার দিন একটু ঘা শুকানোর জন্য অপেক্ষা করলেন। বাসায় খতমে ইউনুছ সহ বিভিন্ন দোয়া মুনাজাত করালেন। অনেক বন্ধু-বান্ধব ধানমন্ডির পাড়া-প্রতিবেশী, অগনিত শুভাকাঙ্খী তার বিপদে এসে সহমর্মিতা জানাল।
কুসুম শেষবেলায় সেই বাসর রাত থেকে তার স্বামীর সাথে তার হৃদয় বিদারক যা যা ঘটেছিল তা খালা, ফুফু সকলের কাছে বর্ণনা করে গেছেন। কুসুমের শরীর খারাপ হলে বাবার কাছে যেতে চাইত। জামাই বলত, তোমার বাবা কি এমন ডাক্তার ? যে তোমার সেখানে যেতেই হবে ? অন্য ডাক্তার দেখাও।
বাচ্চাদের অসুখ হলে কুসুম বাবার কাছে দেখাতে চাইত। জামাই বলত, তোমার বাবা কি চাইল্ড স্পেশালিষ্ট যে শিশুদের রোগ নির্ণয় করবে ? তোমার বাবা আমার মর্যাদা দেয় না। আমার ছেলে-মেয়ের মর্যাদা দিবে ? তোমার মর্যাদা দিবে ? তোমাকে তারা অবহেলা করে, তুচ্ছ বোধ করে। আমিও বড় চাকুরী করি না বলে আমার কোন দাম তোমাদের বাড়ী নেই।
আজ কুসুম মরণ শয্যায় শুয়ে চোখ বুঝে বুঝতে পারছে কে তাকে অবহেলা করে। তার স্বামীকে ভাল করে বুঝতে পারছে। তাকে খবর দিয়ে কাছে আনা যায় না। যদিও কভু আসে, কি যেন বলে, তখন কুসুমের চোখ জড়িয়ে পানি পড়তে থাকে। বাবা, মা দু-জনই কুসুমের পোলাপের মত পাপড়ি ছড়ানো মুখখানার দিকে চেয়ে অঝোর ধারায় কাঁদে। কুসুম মা’র কাছে, ফুফুর কাছে স্বামীর অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে। তাকে মারধর করেছে, তিলে তিলে নরকের মত যন্ত্রণা দিয়ে নিষ্পেষিত করেছে। শোষণে অত্যাচারে তাকে বাচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। বাচার যে একটা স্বাধ আছে তা তার স্বামী তার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। অহরহ তাকে কথায় কাজে পীড়ন করেছে। কুসুমকে নিয়ে মিষ্টার খান ও মিসেস খান ব্যাংককের পথে পাড়ি দিল। সেখানে দু’সপ্তাহ ডাক্তারের যা যা করার সব চেষ্টা শেষ করল। মিস্টার খান জানতো মেয়ে বাচবে না। তবুও বাবা-মার অন্তর মানে না, স্বীকার করে না মৃত্যুকে, অপরাজেয় সে মৃত্যু।

 

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।