সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), কিন্তু কুসুম, তুমি কিসের তৃষ্ণায়, কিসের মোহে সেখানে পড়ে থাকতে চাও ? কুসুম ফ্যাল ফ্যাল করে অবুঝের মত মুখ করে অদৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকত। এমনি করে মা-মেয়ে অনেক কথা হতো। কুসুম কিছুতেই তার স্বামীর কুটির থেকে, তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও নিজ স্বামীর ঐতিহ্য নীড় ছেড়ে মার কাছে বাবার বাড়ীতে আসতে কেন যেন দ্বিধা সংকোচ করতো। তার স্বামী তাকে কড়ায় গন্ডায় ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তার মা-বাবা তাকে অবহেলা করে, করুনা করে, দয়া করে। তার স্বামীর অক্ষমতাকে তুচ্ছ করে। তার ছেলে মেয়ে যেন ঐ বাড়ীর কৃষ্টি কালচারে ধনীর বিলাসে পরিমার্জিত ও পরিগঠিত না হয়।

মা যতই তার অপরিসীম প্রাণভরা স্নেহ দিয়ে দু’একদিন রাখতে চাইতেন, মেয়ে কিছুতেই ঐ প্রিয়তম স্বামীকে ছেড়ে যেতে চাইত না। মি. খান সব সময় অতি ব্যস্ত, লব্ধ প্রতিষ্ঠিত সিনিয়র ডাক্তার, খুবই ব্যস্ত থাকেন। ডায়াবেটিক সেন্টারের তিনি ডি.জি। আর একটা বিদেশী কোম্পানীর তিনি চেয়ারম্যান। বিকেলে চেম্বারে বসে গ্রীন সুপার মার্কেটে। সহসা লোকজন তার এপয়েন্টমেন্ট করতে পারে না। অনেক লোক দূর-দূরান্ত থেকে এসে দু-চারদিন হোটেলে অবস্থান করে তারপর তার সাক্ষাত দিতেন, এমনকি বিনা টাকায় ব্যবস্থা লিখে দিতেন। অতি ভদ্র অমায়িক বিনম্র লোক তিনি। পরিচিত মহলের সকলে তাকে ভালবাসত।

মিষ্টার খান মেয়ের পারিবারিক এসব হাঙ্গামার কথা হয়ত জানতেন না বা মিসেস খানই তাকে অবগত করান নি। মেয়ে জামাইর এত মান অভিমান। মেয়ের প্রতি জামাইর এত অত্যাচার, অবিচার, নৃশংসতা কোনদিন অবগত করান নি। খুব শান্তশিষ্ট, ভদ্র পরিবার বলে তাদের একটা খ্যাতি ছিল, খ্যাতিটুকু ম্লান যেন না হয় সেজন্য হয়ত কুসুমও শত দুব্র্যবহার স্বামীর অশালীন আচরণ সব সময়ই মার কাছে চেপে যেতেন।

কুসুমকে ঈদে বা বিশেষ আয়োজনে স্বামী তাকে একখানা নতুন ভাল শাড়ীও কিনে দেয়নি। তবু মুখ তুলে নিজের চাহিদার কথা বলে নি। নিজের স্বামীর গৌরব বজায় রাখতে গিয়ে মা-বাবার কাছে কিছু চেয়ে তাকে ছোট করে নি। আজ মিসেস খান সাহেবা মেয়ের কথা বলে কাঁদেন আর দুঃখ প্রকাশ করেন। তার হৃদয় পিঞ্জরে অনেক স্মৃতি গুমড়ে গুমড়ে  উঠে অস্থির করে তোলে।

 

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।