ভোলায় পুস্টি নিরাপত্তায় মডেল গ্রাম গড়তে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণ
১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি
ভোলার মেঘনায় রোকনুর ১৯ এর ধাক্কায় বসুন্ধরা গ্রুপের পন্যবাহী জাহাজ ডুবি
ভোলার মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ রোকনুর-১৯ এর ধাক্কায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমভি এসএ বাশার নামের অপর একটি গম পরিবহনকারী জাহাজ ডুবে যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মাস্টার মো: ইউসুফ আলী ভোলার দৌলতখান থানায় পণ্য এবং জাহাজের মোট ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত পন্যবাহী জাহাজ এমপি এসএ বাশার জাহাজটি চৌকিঘাটা এলাকা থেকে কিছুটা দূরে কাত হয়ে অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রায় শতাধিক শ্রমিক ওই জাহাজ থেকে গম সকালে দৌলতখানের চৌকিঘাটা এলাকার মেঘনা নদীর তীরে গেলে দুপুর আড়াইটা দিকে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাটা এবং রামগতি উপজেলার সেলিমবাজার একলাকার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে জাহাজের মাঝ বরাবর বড় ধরণের ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং জাহাজের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এতে ওই জাহাজে থাকা ১৯৫০ মেট্রিক টন গমের ভিতর পানি প্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়। তবে অত্যন্ত দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে দুর্ঘটনার শিকার জাহাজের মাস্টার মো: ইউসুফ জাহাজটিকে কুলের কাছাকাছি নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির মাস্টার এবং স্টাফরা জানান, দুর্ঘটনার পর আঘাতকারী জাহাজ এমভি রোকনুর ১৯ কে দাড়াতে বলা হলে তারা দাড়ায়নি উল্টো দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই এলাকায় নোঙর করে রাখা রোকনুর ৭ নামের অপর একটি খালি জাহাজ ডুবন্ত জাহাজটিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। গত বুধবার বিকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পুর্যন্ত ডুবন্ত জাহাজ থেকে প্রায় দুই শত মেট্রিকটন গম উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের পন্যবাহী জাহাজ এমভি এস এ বাসার এর মাস্টার মো: ইউছুপ জানান, গভীর সমুদ্রের এমভি ইএল মাটাদর মাদার ভেসেল থেকে ১৯৫০ মেট্রিকটন গম নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাড়াকৃত ইরা কর্পোরেশন এর এমভি এসএ বাসার কার্গো জাহাজটি ঢাকায় যাচ্ছিল। এমভি এসএ বাসার জাহাজটি রামগতির সেলিম বাজার এবং দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট এলাকার মাঝামাঝি পৌঁছলে অবৈধভাবে ওভার টেকিং করতে গিয়ে রোকনুর-১৯ সজোরে এসে এমভি এসএ বাসারকে ধাক্কা দেয়। এতে এমভি এসএ বাসার এর মাঝখানের হেজ ফুটো হয়ে গমের মধ্যে পানি ঠুকে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের জাহাজটি পানির নিচে নিমজ্জিত হতে থাকে। পরে দ্রুত জাহাজটিকে দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাটা এলাকার একটি ডুবো চরে নোঙর করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পণ্যবাহী জাহাজগুলো ভোলার এই চ্যানেলটি ব্যবহার করে। চ্যানেলটি সরু হওয়ায় জাহাজগুলো সিরিয়াল করে ধীরে ধীরে চলতে হয়। কিন্তু অনেক সময় কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতায় নামে জাহাজের মাস্টারারা। আর তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই চ্যানেলসহ চট্রগ্রাম-চাঁদপুর-ঢাকার এই নৌরুটটিতে ট্রাফিকিং ব্যবস্থা চালু করা হলে এ ধরণের দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মাস্টার মো: ইউসুফ আলী আরও জানান, ভোলার উপকূলবর্তী মেঘনা নদীর ওই নৌ-রুটটিতে বিআইডব্লিউটিএর কোন ধরণের তদারকি নেই। তাই অধিকাংশ জাহাজের নাবিকরা নিয়ম মানে না। মনমত জাহাজ চালায় এভং দুর্ঘটনার শিকার হয়। তিনি জানান, রোকনুর ১৯ জাহাজটিও অন্যায় অবৈধভাবে এমভি রোকনুর-১৯ জাহাজটি দ্রুত গতিতে এসে তার জাহাজকে আঘাত করে বলে। এই রুটে যদি বিআইডব্লিউটিএ’র তদারকির ব্যবস্থা করা হয় তা হলে এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
বিআইডব্লিউটিএ-র ভোলা বন্দর কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান জানান, জেলায় তাদের মাত্র ৪ জন স্টাফ রয়েছে। তা ছাড়া ২০১৯ সালের এক পত্রে এ ধরণের পণ্যবাহী জাহাজগুলোও তাদের তদারকির আওতায় আনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এখনো তা কার্যকর হয়নি। এখনো কেবল যাত্রীবাহী লঞ্জগুলোই বিআইডব্লিউটিএ তদারকি করে থাকে। অচিরেই হয়তো পন্যবাহী এসব লাইটারেজও বিআইডব্লিটিএ তদারকি করবে। তিনি আরও জানান, চট্রগ্রাম টু ঢাকার এই নৌ রুটটিতে মাত্র দুটি খাড়ি রয়েছে। একটি মূল মেঘনায় যেটি দিয়ে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী জাহাজগুলো যায়। অপরটি ভোলার উপকূলীয় শাহবাজপুর চ্যানেলের মধ্যে। যা দিয়ে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় মালামাল নিয়ে যায়। এই চ্যানেলটির অনেক স্থানে সরু। তাই অতি সাবধানে যাতায়াত করা উচিত।
বসুন্ধরা গ্রুপের সুপার ভাইজার মো: উজির আলী জানান, এ ঘটনায় তারা ১৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি করে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন।
দৌলতখান থানার ওসি মো: বজলার রহমান জানান, মেঘনা নদীতে জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ার ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।