বাংলাবাজার আঞ্চলিক যুবদলের উদ্যোগে আলোচনা সভা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২৫
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), এক ননদের স্বামী বিদেশ থাকেন। প্রচুর টাকা-পয়সা কামাই করে শ্বশুর বাড়ীতে এসে বৌ নিয়ে ধুমধাম খরচ করে খাওয়া-দাওয়া করে। প্রায় সময়ই তার ননদ তার মায়ের কাছে থাকতে ভালবাসে। দেবর ডাক্তার, তার সহধর্মিনীও ডাক্তার। দু’জনই সৌদি আরবে থাকে। প্রচুর টাকার মালিক। ঢাকা এসে বাবা মার কাছে উঠে দু’হাতে পয়সা খরচ করে। কিন্তু কুসুমের স্বামী সে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়েও যা আয় করে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিদেশ গিয়ে চাকুরী ছেড়ে চলে আসে।
কুসুম দোতলায় ছোট একখান ঘরে শ্বশুর বাড়ীতে থাকে। দুপুর বেলায় স্বামীর ঘুমে বা তার বিশ্রামের অসুবিধা হয় বলে ছোট ঝুল বারান্দায় বসে বসে সময় কাটায়। মিসেস নাসিম মাঝে মধ্যে মেয়েকে দেখতে যান। গিয়ে তিনি সবই দেখে, সবই বোঝেন, যাওয়ার পথে মেয়ের জন্য অনেক কিছু কেনা-কাটা করে নিয়ে যান। দোতলায় মেয়ের সাথে বসে গল্প করেন আর মেয়ের অন্তদৃষ্টি সব অনুভব করেন। ভাল ভাল জিনিস পত্র যা কিছু ক্রয় করে নিয়েছে তা-ও মেয়ে নীচ তলায় জা, ননদ, শ্বাশুড়ির হাতে তুলে দেয়। মিসেস নাসিম মনে মনে ভেবেছিলেন মেয়ে-জামাই তার দেওয়া সখের খাবারগুলো সময় সাপেক্ষ রেখে খাবে।
মিসেস খান বেয়ান সাহেবকে অনুরোধ করেন, মেয়েকে কিছু দিন তার বাড়ীতে বেরিয়ে আসার জন্য। বেয়ান সাহেব বললেন, আপনি ছেলেকে বলুন। তিনি জামাইকে বললেন, জামাই কোন উত্তর দিল না। চুপ করে থাকল। মা এসে গাড়ী পাঠিয়ে দেন, কিন্তু দেখেন মেয়ে একাই এসেছে। জামাই আসে নি। যে কোন উৎসব, অনুষ্ঠানে শত চেষ্টা করে জামাইকে আনা যায় নি। মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে বলত, ওর কাজ আছে বা শরীর খারাপ। বেশি জোরাজুরি করে জানতে চাইলে কুসুম কেঁদে ফেলত। বলত, ও নাকি তোমাদের এখানে এসে জামাই মর্যাদা পায় না। তাই আসতে চায় না।
যদিও জামাই আসত, দেখলো ড্রইং রুমে ভাই-বোন মিলে প্রচুর গল্পগুজব করছে। অমনি বলে উঠলো, বাচ্চাকে ঔষধ খাওয়ানো হয় নি বুঝি ? বা ওর স্নান হয় নি না ? তখন মেয়ে মুখ ম্লান করে উঠে যেত। এমন সুন্দর ফুলের মত মেয়ের বিয়ের পর থেকে ওর সুখের হাসি কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কোন পাষানের জেলখানায় হৃদয় বেদীর আত্মহুতি দিল। মিসেস খান মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে শিউরে ওঠে। কুসুম দিন দিন নির্লিপ্ত হয়ে হয়ে আর একটা মেয়ে সন্তানের জন্ম দিল।
(চলবে——–)।