সর্বশেষঃ

জীবন ও জীবিকার বাজেট

করোনাভাইরাসের চলমান মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতির ক্ষত সারানোসহ মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন বাজেটে মানুষের জীবনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সবদিক তুলে ধরেন। সেখানে চারটি কৌশলের কথা বলেছেন তিনি। এর মধ্যে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য, বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণ প্রবর্তন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি।

বিশাল ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’র প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বছরের বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে তার দ্বিতীয় বাজেটটি দিতে হলো এমন এক সময়ে, যখন কোভিড-১৯ এ পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই টালমাটাল অবস্থায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনেও অনিশ্চয়তা। আর সংক্রমণ এড়াতে সীমিত সংখ্যক আইনপ্রণেতাকে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয় এবারের বাজেট অধিবেশন।

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবার কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভূত হয়েছে, তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট তৈরি করেছেন। তাই প্রাণঘাতী করোনাকে সঠিকভাবে মোকাবিলাসহ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠার স্বার্থে গতানুগতিক বাজেটের বাইরে আসার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরির্বতন এনেছেন। নতুন বাজেটে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখাসহ প্রণোদনা রাখার কথা বলেছেন তিনি। অধিক খাদ্য উৎপাদনে কৃষিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে রাখার কথা প্রস্তাবিত বাজেটে বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসনে জোর প্রদান এবং সারের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ও লকডাউনজনিত কারণে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করার কথাও বলেছেন তিনি। আর সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আংশিক বন্ধ থাকায় শিল্প উৎপাদন, এসএমই, সেবা খাত ও গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মহীনতা এবং কর্মহীন হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়নকে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন ও মুজিববর্ষের একটি প্রধান কার্যক্রম হিসেবে গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণকে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা একে জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট হিসেবে অভিহিত করছেন।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য ১০০টি দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলায় সব দরিদ্র্য প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে প্রায় ৩ লাখ নতুন করে উপকারভোগী হবেন।

এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। পাশাপাশি দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র জোগানের জন্য দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা। এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন, তাদের বিশ্বাস ও মনোবলের জায়গাটি অটুট রাখতে। কারণ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন জীবন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, থেমে থাকার জন্য নয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রচিত এই বাজেটের হাত ধরেই আমরা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক ভিত রচনা করব। এরই মধ্যে আইএমএফ ঘোষণা করেছে, আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। যে অমানিশার অন্ধকার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই।

করোনাভাইরাস মহামারিতে থমকে যাওয়া অর্থনীতি পুরুদ্ধারসহ গতি আনতে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পুঁজিবাজরে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতের কর ছাড়ের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়নোর প্রস্তাবও করেছেন তিনি। পাশাপাশি তৈরি পোশাকসহ সব রফতানি পণ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও করা হয়েছে বাজেটে। বিনিয়োগ টানতে এবং পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে নতুন বাজেটে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার, বন্ড, জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র, অ্যাপার্টমেন্ট কালো টাকা সাদা করা যাবে। আন্ডার ইন ভয়েসিং ও ভুয়া বিল প্রমাণিত হলে ৫০ শতাংশ জরিমানার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে টাকা পাচার বন্ধ হবে।

এ বিষয়ে মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে করদাতাদের করভার লাঘব করার জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

করোনার এই করুণকালে অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এজন্য তিনি ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো প্রস্তাব করেছেন। পাশাপাশি করহার কমানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে টানা পাঁচ বছর পর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে। এতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীরা উপকৃত হবেন। নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। নারী, প্রতিবন্ধী ও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা বাড়ছে আনুপাতিক হারে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে বক্তৃতায় বলেন, ‘এ বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্মানীত করদাতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আমি কোম্পানি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণির করদাতারা বিশেষ করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বৃদ্ধি এবং করহার হ্রাসের প্রস্তাব করছি। এই বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করা চিনি ও রসুনের অগ্রিম আয়কর কমানো হয়েছে। ফলে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোভিড-১৯ এর এই চরম বাস্তবতার মধ্যেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার দ্বিতীয় বাজেটে নানা ধরনের স্বপ্নের কথা বলেছেন। রাজস্ব আয় থেকে শুরু করে উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রবৃদ্ধি অর্জন সবকিছুতে উচ্চ আকাক্সক্ষার কথা শুনিয়েছেন। তবে এবারো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় করে তা জনগণের কল্যাণে খরচ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। উচ্চরাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে নানা কৌশলে তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণের কথা বলেছেন। বিভিন্ন খাতকে উৎসে করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন। তবে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতির মতো সামষ্টিক অর্থনীতির গোটা কয়েক সূচক বর্তমানে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটা তাকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।

বাজেট পরিসংখ্যান : ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা; যা এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। মহামারির মধ্যেও অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা করছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৬৬ শতাংশই তিনি রাজস্ব খাত থেকে সংগ্রহ করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এটি বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর-রাজস্ব হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আহরণ করা হবে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। এটি মোট বাজেটের প্রায় ৫৮ শতাংশের বেশি। গতবারের মতো এবারো সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে। ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। এটি বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যপূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা নতুন বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৫ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব গতকাল উপস্থাপন করেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। তবে সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেবেন। এবার বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি পূরণের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নতুন বাজেটে।

বিদায়ী অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ দুর্যোগের মধ্যে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে করোনা পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থবছরের (মোট দেশজ উৎপাদন) জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ লাখ ৮০০ কোটি টাকা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।