সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর ) ঔপন্যাসিকের দৃষ্টিভঙ্গি : রণক্ষেত্রের দামামা বেজে উঠলো। লক্ষ লক্ষ সিপাহী, সমরাস্ত্রী, অশ্বারোহী সৈনিক ছুটে এলো উন্নত আক্রোশে। বিপরীত দিক থেকেও ঝাপিয়ে পড়ল লক্ষ লক্ষ যোদ্ধা। এক দেশের সাথে আর এক দেশের যুদ্ধ। এক জাতির সঙ্গে আর এক জাতির।

ঔপন্যাসিক তখন কোন মিনারের চূড়ায় উঠে নিবেন। সমস্ত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করবেন, রাজার অঙ্গে মখমলের পোষাক পরিচ্ছদ। মাথার মুকুটে মনিমুক্তা হীরার জ্যোতি। সেনাপতির দৃঃসাহসিক অভিযান। সৈন্যদের চিৎকার। এসবের একটা কথাও বাদ দেবে না ঔপন্যাসিক।

লিখে নিবেন কতগুলো হাতি, কতগুলো খোড়া এ যুদ্ধে যোগ দিল। খুটিনাটি প্রত্যেকটি কথা, প্রত্যেকটি বর্ণনা নিয়ে মিলিয়ে লিখে যাবেন। যুদ্ধ জয়ের সৈন্যদল ধেশে ফিরবে যখন, তখন তাদের পিছনে পিছনে ফিরবেন ঔপন্যাসিক। হর্ষধ্বনি আর উৎসবের আনন্দ ছিটিয়ে আহ্বান জানাবেন গ্রামীণ আর নগর কন্যার দল।

এ সকল বিষয়েরও বর্ণনা দেবেন ঔপন্যাসিক। যারা উলুধ্বনির আড়ালে কলরব করে উঠলো, তারপর ? তারপর হঠাৎ তিনি ছোটগুল্পের লেখককে দেখতে পাবেন পথের ধারে। একটি গাছের ছায়ায় বসে আছেন উদাস দৃষ্টি মেলে। এ কোন ঔপন্যাসিক লেখক ? মনে মনে ভাবলেন ঔপন্যাসিক। কোন মিনারের চুড়ায় উঠলো না, দেখল না যুদ্ধের ইতিবৃত্ত, শোভাযাত্রার সঙ্গ নিল না এ কোন ধরনের সাহিত্যিক ? হয়ত এমন কথা বললেন তিনি ছোটগল্পের লেখককে। আর তখন দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকবেন।

ছোটগল্পের লেখক বলবেন, হয়থ না, বন্ধু, এসব কিছুই আমি দেখিনি। কিছু দেখার আমার প্রয়োজন নেই। শুধু একটি দৃশ্যই আমি দেখেছি। পথের ওপারের কোন গবাক্ষের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করবেন তিনি। সেখানে একটি নারীর কাতর চোখ সমগ্র শোভাযাত্রা তন্ন তন্ন করে খুজেও একজনকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চোখের কোন যার ইত্যাকার অশ্রুবিন্দু ফুটে উঠেছে। কে যেন ফের নি, কে একজন ফেরে নি, ছোটগল্পের লেখক সেই ব্যথা বিন্দুর টলোমালো অশ্রুর ভেতর সমগ্র যুদ্ধের ছবি দেখতে পাবেন, বলবেন, হয়তো বন্ধু হে, ঐ অশ্রুবিন্দুর মধ্যেই আমার অশ্রুবিন্দু, অনন্ত সিন্ধু।

 

(চলবে————-)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।