সর্বশেষঃ

আজ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর ২১ বছর

(ম্যাচ অফিসিয়ালি শেষ না হতেই মাঠে ঢুকে পড়েন হাজারো বাংলাদেশি দর্শক। ছবি : ইন্টারনেট )

টেস্ট মর্যাদা না পাওয়া একটি দল মুখোমুখি ভয়ংকর প্রতিপক্ষের। সেই দলে ছিলেন সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম উল হক, ‘সুলতান অব সুইং’ ওয়াসিম আকরাম, বিধ্বংসী ইয়র্কারের জাদুকর ওয়াকার ইউনিস এবং ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ খ্যাত শোয়েব আখতার। অন্যদিকে টেস্ট মর্যাদা না পাওয়া বাংলাদেশ সেই প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গেছে। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেই ভয়ংকর দলটির বিপক্ষেই আসে ঐতিহাসিক জয়। যার ফলশ্রুতিতে পরের বছর আসে টেস্ট মর্যাদা। আজ সেই ঐতিহাসিক জয়ের ২১ বছর পূর্তি হলো।

১৯৯৯ সালের ৩১ মে নর্দাম্পটনে রচিত হয় এই ইতিহাসের। চমকে যায় ক্রিকেটবিশ্ব। বাংলাদেশের জয়টা স্রেফ অঘটন হলেও চারদিকে সাড়া পড়ে যায়, ক্রিকেটে নতুন শক্তির উত্থান ঘটছে। অনেক ভাঙ্গা গড়ার পর সেই বাংলাদেশ আজ ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দেশ। বাংলাদেশের আছে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। অন্যদিকে পাকিস্তান দল এখন ভাঙাচোরা। দুর্নীতি আর অনিয়ম গ্রাস করেছে তাদের ক্রিকেটকে। বাবর আজম ছাড়া তেমন বড় মাপের কোনো ক্রিকেটার নেই। নেই কোনো ভয়ংকর মানের পেসার। জঙ্গি তৈরির কারখানা হওয়ায় দেশটিতে কোনো বড় দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যায় না।

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দলের সেদিন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল। ম্যাচটা কোনোরকম শেষ করেই দেশে ফেরার বিমানে ওঠার পরিকল্পনা। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ আর দ্বিতীয় খেলায় স্কটল্যান্ডকে ৯৪ রানে হারিয়ে টগবগ করে ফুটছিল পাকিস্তান। কিন্তু মেহরাব অপি, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, নাইমুর রহমান দুর্জয় খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, শফিউদ্দীন বাবু আর নিয়ামুর রশিদ তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দেন। পাকিস্তান হেরে যায় ৬২ রানে।

টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় পাকিস্তান। ওপেনার বিদ্যুৎ (৬০ বলে ৩৯), আকরাম (৬৬ বলে ৪২), সুজন (৩৪ বলে ২৭), বুলবুল (১৫), দুর্জয় (১৩), নান্নু (১৪), পাইলটের (১৫) ব্যাটে বাংলাদেশ ২২৩ রানের মাঝারি স্কোর গড়ে। এই রান চেজ করা পাকিস্তানের জন্য ডালভাত ছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ ধরেই নিয়েছিল যে ম্যাচটা হারবে। তাই দলে দুই পেসার শান্ত আর মঞ্চু ছিলেন না। কিন্তু বল হাতে ধাঁরালো আক্রমণ শুরু করেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তার প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই গালিতে মেহরাব অপির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শহিদ আফ্রিদি। পরবর্তীতে ইনজামাম উল হক আর সেলিম মালিকও সুজনের শিকার হন।

ম্যাচের শেষ দিকে সাকলাইন মুশতাকের বিরুদ্ধে রান-আউটের জোরালো আবেদন হয়। সিদ্ধান্ত চলে যায় থার্ড আম্পায়ারের কাছে। দেশে বসে রেডিওতে কান পেতে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা তখন একটি কথাই শুনতে পারছিলেন, ‘ম্যাচ এখনও শেষ হয়ে যায়নি, কিন্তু বিজয় উদযাপন করতে নর্দাম্পটনের মাঠে ঢুকে পড়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি সমর্থক!’ নর্দাম্পটনশায়ারে আকাশে পতপত করে উড়তে থাকে লাল সবুজ পতাকা। বাংলাদেশ এখন ওয়ানডের বড় দল, বড় বড় সব তারকায় ভর্তি। আছে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। কিন্তু আজ থেকে ২১ বছর আগের বিশ্বকাপে যদি সেই জয় না আসত, তবে দেশের ক্রিকেট অনেক বছর পিছিয়ে থাকত।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।