জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-১৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), দ্বীপের রাণী ভোলা (১৯৯৩ সালের সমীক্ষার আলোকে) : বিশ্বের “ব-দ্বীপ” বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশের “ব-দ্বীপ” হচ্ছে ভোলা। ভোলাকে বলা হয় দ্বীপের রাণী। রাজার রাণী যেমন আকর্ষনীয় ও আলোচিত হয়, তেমনি ভোলা দ্বীপ বাংলাদেশের বিভিন্নাঞ্চলে আলোচিত নাম। সাদামাটা সুন্দর এ দ্বীপ চারদিকে নদী-নালা পরিবেষ্টিত। ৬টা থানার (বর্তমান ৯টা) সাথে জেলা সদরের রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। মনপুরা থানা মূল ভূ-খন্ড হইতে বিচ্ছিন্ন। মেঘনা নদী “মনপুরা”কে বিচ্ছিন্ন করেছে। অপর একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ হলো “মনপুরা”।

১৯৮৪ সালে ভোলা জেলা হিসেবে উন্নতি লাভ করে। ১৯৪৫ সালে ভোলা মহকুমায় রূপান্তরিত হয়েছিল। এই জেলর আয়তন ২৫৩০ বর্গ কিলোমিটার, লোক সংখ্যা ১৪ লক্ষ, বর্তমানে ১৮ লক্ষ প্রায়। ১৯৭০ সালের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে ভোলা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার লোকের করুন মৃত্যু ঘটে। সরকারী পরিসংখ্যানে ভোলা-দৌলতখানের প্রায় ৩০ হাজার লোক মারা যায়। ঐ সময় ভোলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত লাভ করে।

ধীরে ধীরে ভোলা আবার পুনঃর্গঠন শুরু হয়। অক্লান্ত পরিশ্রমী ভোলাবাসী নিজ এলাকা গড়ার জন্য বছরের পর বছর নিজেদের শ্রম ব্যয় করেন। সমস্যার বেড়াজাল হইতে ভোলা ধীরে ধীরে মুক্তি লাভ করে। ভোলা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বছরের প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। কৃষি জমির পরিমান প্রায় ৪ লক্ষ একর। জমিতে তিনটি ফসল ফলে। সারা বছর জমিতে ফসলের সমারোহ থাকে। শিক্ষিত লোকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও পূর্বের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশী।

১৯২০ সালে ভোলা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা লাভ করে বর্তমানে ভোলায় ৫টি পৌরসভা আছে। ভোলা শহরের আয়তন প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার লোক সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার। পাকা রাস্তা প্রায়ই দুই তৃতীয়াংশের বেশী। বার্ষিক আয় ১০ কোটিরও বেশী। ব্যয় তদপেক্ষা আরো বেশী। সরকারী অনুদান প্রয়োজনের তুলনায় কম। বর্তমানে ভোলা পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার আওতায় আছে। উন্নয়ন প্রকল্প কর কাঠামোর প্রচলন রয়েছে।

এক সময় ভোলায় পানি সমস্যা প্রকট ছিল, বর্তমানে তা প্রায় শতভাগ উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যা পূর্বের তুলনায় বহু অংশে উন্নতি হয়েছে। পাবলিক টয়লেটের অভাব, অন্যদিকে টয়লেট খুব কম থাকায় জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন ছিল। বর্তমানে তা অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ভোলা জেলা সার্বিক মূল্যায়নে অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেকাংশ এগিয়ে আছে।

ভোলার মাটি ও মানুষের সাথে আমাদের অতীতের স্মৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আমার বাবা খান বাহাদুর নূরুজ্জামান (এম.বি.ই) ভোলার উন্নয়নের একজন রুপকার ছিলেন। ভোলা জেলায় যখন কোথাও বিশুদ্ধ পানি পানের সু-ব্যবস্থা ছিল না, তখন মানুষ পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করত। ঐ সময় আমার বাবা সর্বপ্রথম ভোলা শহরে “মেঘনা ডিপ টিউবওয়েল” স্থাপন করে ভোলা শহরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানির সু-ব্যবস্থা করেছিলেন। যা আজও ২০১২ সাল বর্তমান এস.পি অফিসের সামনে অবস্থানরত সঠিক মূল্যায়নে ভোলা জেলা একটি উন্নয়নশীল জেলা হিসেবে উন্নীত হয়েছে।

 

(চলবে—————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page