সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-১০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), এদের মাঝে আমার ডা. ফজলে রাব্বীর কথা বিশেষভাবে মনে পড়েছে। কারণ তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানতাম। বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হলে তাকে দেখাতাম। একবার তার চেম্বারে গেলাম, আমার সিরিয়াল ছিল অনেক পরে। আমি অপেক্ষা করছিলাম। এরই মাঝে এক লোক ডা. রাব্বীর কাছে আসল। এক পায়ে স্যান্ডেল ছিল অন্য পায়ে ফিতা ছেড়া দড়ি দিয়ে বাধা স্যান্ডেল। পরনে শুধু একটা ধুতি। খালী গা। ডা. রাব্বি জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কখন এসেছেন ? লোকটি বলল, প্রথমেই এসেছি। তখন ডা. রাব্বি বলেন, তাহলে আপনি এখন এসেছেন কেন ? লোকটি বললেন, আপনার কম্পাউন্ডার আমাকে এখন দিয়েছে। তখন তিনি কম্পাউন্ডারকে জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর দিতে পারেনি। তখন ডা. রাব্বি কম্পাউন্ডারকে বললেন, গরীব বলে লোকটাকে পরে দিয়েছ, যাও তোমার চাকরী শেষ। একটা টিবির রোগীকে এ ধরনের আচরণের কম্পাউন্ডারের এই শাস্তি। তার এই মানবতাবোধ দেখে আমি সহ অন্যান্যরাও মুগ্ধ হলাম।

সত্যিকার মানুষ তারাই ছিল। আর তাদের এ অশুভ পরিণতি হয়েছিল। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির স্বপ্নসাধ পুরণ হয়। এ দিন পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের কাছে। পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী ঢাকায় মিত্রবাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার জেনারেল অরোরা এবং বাংলাদেশের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কেেএ খন্দকারের কাছে আত্মসমর্পন করলে এই মহান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

এই যুদ্ধ চলাচালে কত লাখ বাঙ্গালী পাকিস্তানীদের হাতে প্রাণ হরায় তাৎক্ষনিক ভাবে তা গণনা করা সম্ভব ছিল না। অনুমান করা হয়েছে এর সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। স্বজন হারানোর বেদনায় অগনিত মানুষের হাহাকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও বিজয়ের আনন্দে মহা উল্লাসে বাংলার আকাশ বাতাস আবার আমোদিত হয়ে উঠে।

৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশের একচ্ছত্র নেতা ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী বিশ্ব জনমতের প্রবল চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু তার মুক্ত স্বাধীন দেশেল মাটিতে পা রাখলেন। লাখ লাখ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে এ দিন ঢাকায় বিমান বন্দরে তাদের প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জানায়। পরে রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, সাত কোটি বাঙ্গালীর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, স্বাধীন থাকবে।

দেশ স্বাধীন হবার পরে আমি আমার প্রিয় নেতার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। একটি কবিতা লিখে নিয়েছিলাম সাথে করে। দেখা করে ভীরু হৃদয়ে বললাম, আমি একটি কবিতা লিখেছি।

 

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।