সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), মেজর ডেভিডসন আমাকে ট্রেনিং দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি একজন ক্যাপ্টেন ? তাহলে বসে আছেন কেন ? দেখছেন না দেশের দুর্দিন, মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং দিন। যেন মেয়েরা শুধু গুলি খেয়ে না মরে, দুই একটা মারতে পারে। পরে চলে আসার সময় তিনি আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। যখন জানতে পারলেন খান বাহাদুর নুরুজ্জামান আবার বাবা। তিনি তখন আরো বেশি প্রফুল্ল হয়ে বললেন, আপনি খান বাহাদুর সাহেবের মেয়ে ? আপনি এমন একজনের সন্তান, হ্যাঁ, আপনি পারবেন। আপনাকেই দায়িত্ব দিলাম। তিনি আমাকে সাজেদা চৌধুরীর বাড়ীতে মেয়েদের ট্রেনিং দেওয়ার কথা বলেন।

আমি তখন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে “মরিগ হাউসে” এসে দেখলাম। অনেক মেয়ে ষোল থেকে বাইশ বছরের। সবাই দেশকে ভালবেসে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চায়। কিন্তু রাইফেল মাত্র ৩০টি। সবাই বলে আমি আগে শিখব। আমাকে রাইফেল দেন। ভীষণ মুশকিলে পড়লাম। সবাই হুলুস্থুল করছে। আমি মেয়েদের বললাম শৃঙ্খলাই জীবন।

তোমাদের দেশে আমার একটি গল্প মনে পড়েছে। একদিন এক ব্রাহ্মণ খালি গায়ে গায়ের পথে চলছিল। হঠাৎ ভুতের সাথে দেখা। ভুল বলল, ঠাকুর কোথায় যাচ্ছ ? ঠাকুর বলল, যা বিরক্ত করিস না। আমার কাজ আছে। ভুল বলল, কি কাজ আমাকে বলতে হবে ? ঠাকুর বলল, একটা মানুষের শ্রাদ্ধ করতে যাচ্ছি। ভুল বলল, শ্রাদ্ধ কি ? তখন ঠাকুর বলল, মানুষ মরে গেলে আমরা শ্রাদ্ধ করাই।

তখন ভুত বলল, আমিও আমার বাবার শ্রাদ্ধ করাইব। ঠাকুর বলল, বেশ। আয়োজন কর, করে আমাকে ডাকিস। সপ্তাহ খানেক পর ভুল আসল। তারপর বলল, চল ঠাকুর সব আয়োজন শেষ। ঠাকুর গিয়ে দেখল হাজার হাজার ভুল মাঠে। সবাই তার বাবার শ্রাদ্ধ করতে চায়। তারা রীতিমত ঝগড়া শুরু করে দিল। ঠাকুর দেখে ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

মেয়েরা গল্প শুনে খুব হাসল ও লজ্জা পেল। বলল, আপনি যে ভাবে ভাল হয় সেভাবেই করুন। আমি তখন ষোল থেকে বাইশ বছরের মেয়েদের আলাদা করে নিলাম। একটা একটা করে প্লাটুন ট্রেনিং দিয়েছি। ৩০ জনে একটা প্লাটুন। টেনিং দেওয়া খুব পরিশ্রমের কাজ। আমার মাথার ঘাম পায়ে পড়েছে।

একদিন আইভী রহমান ( প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান সাহেবের স্ত্রী) আমাকে বললেন, আপনি এত কষ্ট করে ট্রেনিং দিচ্ছেন আপনার লাভ কি ? সত্যিই তো আমার কি লাভ ? আমাকে কেউ চা-ও খাওয়ায় না। এক গ্লাস পানি-ও দেয় না। ড্রইং রুমেও ডেকে নিয়ে বসায় না। কিন্তু আমি বললাম, লাভ তো কিচুই নেই। কিন্তু আমি দেশকে ভালবাসি। তাই বঙ্গবন্ধুর আদেশে আমি এ সব মেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে আমার শিক্ষা কাজে লাগাচ্ছি। আমাদের দেশের  জন্যই আমার এই কষ্ট। অন্য কোন কারণ নেই।

 

(চলবে———–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।