জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৬
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেল। পরে অবশ্য আমি আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছাড়া পেলাম। কিন্তু আমার পিছনে পুলিশ ছায়ার মত লেগে গেল। কোথায় যাই, কি করি, কি বলি এমনকি বাড়ীতেও পাহারা পড়ে গেল। আমার কারণে আমার স্বামীর চাকুরীতে অনেক সমস্যা হল। কারণ তিনি তখন খুলনা জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট্ ছিলেন। এ কারণে আমাকেও আমার ফাস্ট ক্লাস স্বামীর কথা শুনতে হয়েছে। আমার স্বামীকে খুলনা থেকে বদলী করা হয়েছে, তার পদোন্নতি নিয়ে অনেক সমস্যা করেছে। আমার ছেলে মেয়েরাও আমার এসব কাজ পছন্দ করত না। কিন্তু তবুও আমি আমার কাজ বন্ধ রাখিনি।
২১ ফেব্রুয়ারী সারা দেশে হরতাল ঢাকা হল। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ২০ তারিখ সন্ধ্যায় ঢাকার সর্বত্র ১ মাসের জন্য হরতাল, সভা সমিতির নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। এত বাধার মুখেও একের পর এক মিছিল চলতে থাকে হরতালও সফল ভাবে চলছিল। ঠিক এ রকম অবস্থায় পাকিস্তান সরকারের সরাসরি নির্দেেশে ছাত্রদের উপর গুলি চালানো হয়।
ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে ছালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা আরো অনেক তরুনের তাজা প্রাণ। ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হলো। হত্যাকান্ডের এই খবর শহরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটে। প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষের মিছিল সমাবেশে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন কৌতুক করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারী আবারো হরতাল এবং গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন সংবাদ পত্রে ৩জন নিহত, ৩০০ জন আহত, ১৮০ জন গ্রেফতারের খবর ছাপা হয়। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে সচিবালয় কোন কাজ কর্ম হয় না। মন্ত্রীরা সব পালিয়ে সেনানিবাসে অবস্থান করে। ফলে মুসলিম লীগ সরকার পুরো বিকল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অত্যাচারীরা বাধ্য হয়। আমাদের ভাষা আমাদের ফিরিয়ে দিতে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা হল। রার শহীদদের রক্ত স্নাত বলিদানের কথা স্মরণ রাখতে ২১ শে ফেব্রুয়ারী হল মাতৃভাষা দিবস।
(চলবে——————-)