মনপুরায় ফেইসবুকে মহানবীকে কুটক্তি, পুলিশ-মুসল্লী সংঘর্ষের ঘটনা

মনপুরায় আটককৃত যুবকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা, জেল হাজতে প্রেরণ

ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরে ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ভোলার মনপুরায় আলোচিত ফেইসবুকে মহানবী (সাঃ) ও বিবি আয়শাকে জড়িয়ে সনাতন ধর্মীয় এক যুবক মৎস্য ব্যবসায়ী ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর উত্তেজিত মুসল্লী ও পুলিশের মধ্যে ঘন্টাব্যাপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সময় পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে আহত হয় ১০ জন। এদের মধ্যে একজন মনপুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে শুক্রবার সংঘর্ষে পূর্বে পুলিশ কুটক্তি পোস্ট করা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে মৎস্য ব্যবসায়ী যুবক শ্রীরামকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে। রাতেই ওই যুবক মৎস্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পুলিশের এস.আই আলাউদ্দিন শিকদার বাদী হয়ে ডিজিটাল আইনে মামলা দায়ের করে। পরদিন শনিবার সকালে ওই যুবককে আদালতের মাধ্যমে ভোলা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় বলে জানান ওসি সাখাওয়াত হোসেন।

এছাড়াও শনিবার সকালে থানায় এসে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের অভিযোগে ফেইসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া যুবকের পিতা মনপুরা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য দুলাল চন্দ্র দাস ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানান ওসি।

পুলিশ ও মামলার বিবরন সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল টাঙ্গাইলে ৬ বছরের শিশু ধর্ষনের চেষ্ঠা মামলার আসামী বাবুল রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১২। উক্ত গ্রেফতারে ও ঘটনার সাথে মহানবী (সাঃ) ও বিবি আয়শাকে জড়িয়ে Monpura Fish আইডি থেকে কুটক্তিমূলক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার পোস্ট দেয় মৎস্য ব্যবসায়ী যুবক শ্রীরাম চন্দ্র দাস। VIVO স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে পোস্ট দেয়। পরে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪(২)/২৫ (২)/২৮(২)/৩১(২) ধারায় মামলা করে।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মৎস্য ব্যবসায়ী সীতাকুন্ড এলাকার বাসিন্দা শ্রীরাম চন্দ্র দাস ঘটনার তিনদিন আগে ফেইসবুকে মহানবী (সাঃ) ও বিবি আয়শাকে নিয়ে কুটক্তিমূলক পোস্ট দেয়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার ভাইরাল হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে শুক্রবার জুম্মার নাজাজের পর রামনেওয়াজ বাজার জামে মসজিদের মুসল্লী, কাউয়ারেটেক কিল্লার পাড় জামে মসজিদের মুসল্লী ও চৌমুহনী বাজার জামে মসজিদের মুসল্লীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিলসহকারে মনপুরার রামনেওয়াজ নতুন বাজার সংলগ্ন চৌমুহনী বাজারে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করে।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্ঠা করে। একপর্যায়ে কিছু সংখ্যক উত্তেজিত জনতা শ্রীরামের চৌমুহনী বাজারে ভাড়া দেওয়া ঔষধ ও সেলুনের দোকান ঘরে হামলা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের ঘন্টাব্যাপি সংর্ঘষ বাঁধে। এই ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। পুলিশের গুলিতে ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে করিমকে মনপুরা সদর হাসপাতালে ও অপর ৯ জন জহির, সাইফুল, আল আমিন, রাহাত ও ছোট করিমকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতারি ও মাগরিবের নামাজের পর হাজিরহাট ইউনিয়নের ফকিরহাট বাজারে স্থানীয় মুসল্লীরা মিছিল করে সনাতনধর্মীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দীপক, যুবলীগ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ও যুবলীগ নেতা সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মামুনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনাশুনে ইউএনও ও ওসি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়।

এদিকে পরপর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত ১০ টায় উপজেলা হলরুমে উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী, ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস, ওসি সাখাওয়াত হোসেন ইমাম, আ’লীগেও উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতা, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। রাত ২ পর্যন্ত চলা বৈঠকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন উপজেলা প্রশাসন। এই সময় আলেম সমাজ মহানবীকে নিয়ে কুটক্তির বিষয়ে আইন করে শাস্তির দাবী জানান।

এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, পরিস্থিতি শান্ত আছে। ১২ জন দাঙ্গা পুলিশ এসেছে। আটককৃত যুবকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভাংচুরের ঘটনায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন আটককৃত যুবকের পিতা দুলাল চন্দ্র দাস।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস জানান, ইমাম, রাজিৈতক ব্যাক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাথে ঘটনা নিয়ে বেঠক হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রযেছে। ফেইসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।