ভোলার চরসামাইয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা ॥ গ্রেফতার-১

ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক পক্ষের মামলায় সুমন (২০) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আকবর হোসেন রাসেল (৪০) এর সাথে একই এলাকার মোঃ দুলাল গংদের সাথে বিগত দিনগুলি থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে বিরোধ চলে আসছে। ওইসব ঘটনায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। ঐ বিরোধের জের ধরে বিগত ১৫ এপ্রিল ২০২০ইং তারিখে কোন এক সময় বাদী শাহে এমরানের ভাগ্নিপতির গাছের চারা বিবাদী মোসাঃ নুর হাফছা গংদের ছাগলে খেয়ে ফেলে। এনিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাদীর বোন মোসাঃ হাছনেহানার সাথে মোঃ দুলালের তর্ক-বিতর্ক হয়। এর এক পর্যায়ে মোঃ দুলালের নেতৃত্বে মোঃ সুমন (২০), ছালেকা বেগম (৩৭), মোঃ আলাউদ্দিন (৪৭)সহ আরো ২/৩ জন একত্র হয়ে অস্ত্র-শস্ত্র, লাঠি-সোটা, লোহার রড, বগি দা নিয়ে হামলা চালায়। এসময় মোসাঃ হাছনেহানার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। হাছনেহানাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বগি দা দিয়ে কোন দিলে তা তার বাম হাতের জব্জিতে লেগে কেটে যায়। এ ছাড়া অন্যান্যদের মারধরে তার শরীরের কোমরে, পিঠে, বাম পায়ের রানে এবং নাক ফেটে যায়।
অভিযোগে আরো জানা যায়, হত্যার উদ্দেশ্যে হাছনেহানার শ্বাসরোধের চেষ্টা করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কাপড়-চোপড় টানা হেচড়া করে শ্লিলতাহানীর চেষ্টা করে। এ সময় তার শরীরের কানে, গলায় থাকা স্বর্নের কানপাশা ও চেইন নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ৭২ হাজার ৪শ’ টাকা। এসময় তার ডাক-চিৎকারে বাদী শাহে এমরান ও অন্যান্যরা এগিয়ে আসে। তখন দুলাল গংরা শাহে এমরানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল পলায়ন করে। তাৎক্ষণিকভাবে হাছনেহানাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শাহে এমরান বাদী হয়ে গত ১৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নং-২২। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ভোলা থানা পুলিশ ২ নম্বর আসামী মোঃ সুমন (২০) কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী শাহে এমরান বলেন, দুলাল গংদের সাথে আমার বোন-ভগ্নিপতিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধের জের ধরে ছাগলে গাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়ে প্রায় ৭৩ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আমরা এ ঘটনায় ভোলা থানায় মামলা করলে সুমন নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে।
অন্যদিকে মোসাঃ নুর হাফছা বাদী হয়ে শাহে এমরানকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করে। ওই মামলায় তারা উল্লেখ করেছেন, এলাকায় শাহে এমরান ও আকবর হোসেন রাসেল এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রয় করেন। এলাকায় তা বিক্রয় করতে নিষেধ করা নিয়ে তাদের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় নুর হাফছা’র বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গত ৫ মে ২০২০ ইং তারিখে ভোলা থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-০৫।
এ ব্যাপারে মোসাঃ নুর হাফছা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শাহে এমরান ও আকবর হোসেন রাসেল এলাকার খারাপ ও দুস্কৃতিকারী লোক। তারা এলাকায় মাদক বিক্রি করছে। আমার শ্বশুর ও স্বামী মাদক বিক্রি করতে বারন করলে তারা আমাদের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। আমরা এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। হামলা ঘটনা ঘটেছে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে আর মামলা করেছেন মে মাসের ৫ তারিখে। এতদিন পর কেন মামলা করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক লোকের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, দুলাল গং এবং শাহে এমরান একই ইউনিয়নের পাশাপাশি বসবাস করছে। তাদের সাথে পারিবারিকভাবে বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, শাহে এমরান মাদক বিক্রেতা কিংবা ব্যবসায়ী নয়। সে একজন ভদ্র লোক। তার বিরুদ্ধে দুলাল ও নুর হাফছা গংরা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে।
এ ব্যাপারে চরসামাইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মাতাব্বরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুলাল গং এবং শাহে এমরান গংরা আমার ইউনিয়নের দুই ওয়ার্ডের পাশাপাশি বাসিন্দা। উভয়ের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে উভয়কেই বলেছি কিছুদিন অপেক্ষা করুন, এ ঘটনার সমাধান করে দিব।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।