হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পের কারিগর বাবুই পাখি
স্বাধীনতার সুখ চিরায়ত বাংলার কবিতাখানি মনে হলে, মনে পড়ে যায় সেই শৈশবের মধুময় অনেক স্মৃতি। নিখুঁত শিল্পের কারুকাজ মন্ডিত কারিগর পাখির মধ্যে একমাত্র বাবুই পাখিই সেরা। এজন্য এ পাখিকে শিল্পের কারিগর পাখি বলা হয়। কবি রজনী কান্ত সেন রূপক অর্থে শিল্পের কারিগর বাবুই পাখিকে কেন্দ্র করে লিখেছেন তার অমর ছড়া কবিতা খানি।বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর, শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। এছাড়াও বাবুই পাখি নিয়ে রয়েছে ”প্রেম হইলোরে বাবুই পাখির বাস” এরমতো বিভিন্ন বাংলার জনপ্রিয় গান।
পৃথিবীতে ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখি রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৩ প্রজাতির বাবুই পাখি। যথাক্রমে দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও বাবুই পাখি নেই।
গ্রামের পুকুরপাড়ে মাঠেরধারে অথবা নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির উঁচু গুলো হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিলুপ্তির পথে নিপূন নির্মাণে ব্যস্ত নিজঘর বুনা শিল্পমনা রোমান্টিক বাবুই পাখি। এখন আর ভোলার গ্রাম বাংলার তালগাছ, খেজুঁর গাছ, নারিকেল গাছের মতো উচু কোন গাছের ডাল পালার মধ্যে সচরাচর দেখা যায়না সারিবদ্ধ ভাবে ঝুলন্ত দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। গ্রামগঞ্জের কয়েক মাইল হেটেও দেখা মেলেনা বাবুই পাখি ও বাসা। শোনা যায়না তাদের কিচিরমিচির আওয়াজ কিংবা শব্দ।
এ পাখিটি এখন বিলুপ্তের পথেই বলা চলে। ভোলার ইলিশা, ভেলুমিয়া, বাপ্তা, উত্তর দিঘলদীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের তালগাছ ও খেজুর গাছে বাবুই পাখির বাসা লক্ষ্য করা গেছে। তবে পাখি ও বাসার পরিমান খুবই সামান্য। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে মানুষের কবলে পড়ে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছসহ উচু সব গাছ। কেটে উজার করে ফেলা হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম চির সবুজের বৃক্ষের সমরোহ। তৈরী হচ্ছে সব আধুনিক শহর ও ঘর বাড়ি। কালের বির্তণে হয়ত এক সময় আর বাবুই পাখির বাস চোখেই পড়বেনা কারও।
এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনা মাত্র। বাবুই পাখি কখনো কখনো কুঁড়েঘরের কোণে বাসা বাঁধলেও তালগাছ ও খেজুরগাছেই মূলত এরা ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায় এবং নিপুন কারুকাজে দৃষ্টিনন্দন বাসা বুনে। এবং পুরুষ বাবুইদের বুনা বাসা পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুইরা ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের আঁধারে বাবুইরা বাসা আলোকিত করার লক্ষ্যে জোঁনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলে জোঁনাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়!
বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। দেখার স্বাধ থাকলেও খুব সহজে খুঁজ মিলেনা বাবুই পাখি ও বাসার। সচারাচর এখন আর শুনা যায়না সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুইদের কিচিরমিচির ডাক। তাই আমাদের একটু সচেতনতা অবলম্বনের মধ্যেই টিকে থাকতে পারে এ পাখির বংশ।