জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), ১৯৫৪ সাল, আমি তখন খুলনায়। যুক্তফ্রন্টের তোড়জোড় চলছিল। প্রায়ই মিটিং মিছিল হত। একদিন খুলনা মিউনিসিপ্যাল হলে এক সভায় মহিলা নেত্রী কে হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। সকল গন্যমান্য ব্যক্তিদের মতানুযায়ী আমাকে আওয়ামীলীগের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হল। আমি বেশ ইতস্তত করছিলাম।

এরপর থেকে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে আমি নিয়মিত বকৃত্তা দিতে লাগলাম। মুসলিম লীগ গভর্নমেন্ট আমার বক্তৃতার কারণে নজরবন্দী করল। খুলনার ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিষ্ট্রেট কামরুল ইসলাম আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে আমার ক্যানভাস বন্ধ করতে বলেন। বদরুন্নেছা আহমেদ, আয়েশা সরদার (মুসলিম লী) আমাকে এসে বললেন আমি যেন তাদের পক্ষে কাজ করি। আমি তখন করোনেশন গার্লস হাই স্কুলের ডেনার।

পাকিস্তান মহিলা রক্ষীবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছি। সেইসুবাদে ১৯৫১ সালে আমাকে যশোর, খুলনা, বরিশালে এই চার জেলায় কোম্পানী কমান্ডার নিযুক্ত করা হল। খুলনা সার্কিট হাউজে আমার প্রথম বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হয়।

১৯৬৯-এ আমার স্বামী অবসর গ্রহণ করলে আমার ঢাকায় বসবাস শুরু করলাম। ঢাকায় এসে আমার সামনে রাজীনির বিশাল দরজা খুলে গেল। আমি মহিলা আওয়ামীলীগের সাথে মিলিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ঝাপিয়ে পড়লাম। একদিন কে যেন আমাকে বলল, বঙ্গবন্ধু আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে গেলাম। কথাবার্তায় বঙ্গবন্ধু যখন জানলেন আমি পিডব্লিউএনজি এর ক্যাপ্টেন, তখন তিনিই আমাকে বলেন, দেশের জন্য কিছু করেন। মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং দেন। যাতে মেয়েরা একেবারে অযথা না মরে দু-একটা শত্রুর ধ্বংস করতে পারে। আমি তার কথায় দারুনভাবে উৎসাহিত হয়ে দেশের জন্য কাজে নেমে পড়লাম। ১৬ থেকে ২২ বছর বয়সী মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং দিলাম, যারা দেশকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে।

এর মধ্যে আমার স্বামী বললেন, চট্টগ্রামে পাকিস্তানী আর্মি এসে পড়েছে। আমাদের ঢাকায় থাকা যাবে না। আমি আমার ১১ সন্তানকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে ভোলা যাচ্ছি। আমাকে যেতে বললেন, আমি বললাম যে বঙ্গবন্ধুর দেয়া দায়িত্ব পালন শেষ না করে আমি নড়তে পারবনা। ওনি বললেন, তুমি থাক এবং মর। আমার স্বামী চলে গেলেন। শুধু আমার ছোট দুধের বাচ্ছাটি আমার সাথে ছিল। আমি মেয়েদের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় মুগ্ধ হলাম। তাদের ফাস্ট এইড ট্রেনিংও দিয়েছিলাম।

 

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।