সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে

ড. তাইবুন নাহার রশীদ কবিরত্ন

নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ বরিশাল। বরিশাল থেকে বিশাল কালাবদর নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সমুদ্রের নোনা পানিতে সিক্ত সবুজ বন, নারিকেল সুপারির সমৃদ্ধ অঞ্চল ভোলা। কেউ কেউ বলে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা এ অঞ্চলটা একটা দ্বীপ। চারদিকে অথৈ পানি। পানির সাথে সংগ্রাম করে এখানকার মানুষ বাচে। প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করা এখানকার মানুষের স্বভাব। এই ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অঞ্চলেরই মেয় আমি। যদিও আমার জন্ম দৌলতখানে। কিন্তু আমার শৈশব ও কৈশোর জড়িয়ে আছে ভোলার প্রকৃতির সাথে।

আমার বাবা “খান বাহাদুর নুরুজ্জামান” ভোলার প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন জমিদার ছিলেন। রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়েও আমি বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছায় বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করার সামান্য সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন বাল্য বিবাজ সমাজে প্রচালিত ছিল। আমার বিয়ে হয় ১২ বছর বয়সে। তাই কৈশোরের চঞ্চল দিনগুলো আগলে বন্দী করে চলে আসতে হয় শ্বশুর বাড়ী। স্বামী ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আবদুর রশীদ। আমার সাথে বয়সের ব্যবধান ছিল প্রচুর। সরকারী চাকুরে আমার স্বামী সারাদিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে কাটান। আর গৃহের অভ্যন্তরে আমার বন্দী জীবন। তখনকার সামাজিক প্রথাকে না মেনেও কোন উপায় ছিল না।

মুসলমান মেয়েরা তো বলতে গেলে অসূর্যস্পর্শা ছিল। কিশোরী বধু থেকে কিরোশী মায়ে রূপান্তরিত হতেই অনুভব করলাম কত দ্রুত আমার কৈশোর হারিয়ে যাচ্ছে। যখন বাবার বাড়ীতে ছিলাম, তখন বাংলা বই পুস্তক পত্র-পত্রিকার দেখা মিলত। কিন্তু বিয়ের পরে আমি কোন বাংলা বই-পুস্তক বা পত্র-পত্রিকার মুখ দেখিনি। কিন্তু মনের কথাগুলো ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করার এক তীব্র বাসনা ছিল। আর এর ফলস্বরূপ ১৯৩৪ সালে আমি গৌড়বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ থেকে কবিরত্ন উপাধি লাভ করি। বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানেও কবিতা আবৃত্তি করার আগ্রহ আমার ছিল।

আমার স্বামী ছিলেন রাশভারী লোক। কিন্তু যখন তিনি আমার সৃজনশীল কর্মক্ষতার পরিচয় পেলেন তখন তিনিই আমাকে সৃষ্টিশীল এ কাজের জন্য উৎসাহিত করতে লাগলেন। আমি নাটক বরতে পছন্দ করতাম। কিন্তু উনি সব সময় বলতেন যেন আমি লেখি। তিনি চাইতেন আমার নিজস্ব কিছু সৃষ্টি হোক আমার স্বামীর সাথে আমি ১৯৩৯ সালে তার চাকরির সুবাদে চলে যাই সিরাজগঞ্জে। সেখানে দুই-তিন বছর থাকার পর আমরা খুলনায় চলে গেলাম। এভাবেই অতিবাহিত হতে থাকল আমার বিবাহিত জীবন।

(চলবে—————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।