সর্বশেষঃ

শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), আর একটি কথা আমার কাছে বার বার মনে পড়ে, সেদিন বঙ্গবন্ধু তার বাসায় ঘরভর্তি লোকের মাঝে আমাকে কম্যান্ডার ইন চীফ্ বাংলাদেশ বলে ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে তখন একটি কথাই বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু আমি বৃদ্ধা বলে আপনি আপনার মুখে আমাকে এত বড় সম্মান দিলেন, আমি জোয়ান থাকলে হয়তো আমাকে এত বড় সম্মান দিতেন না। বঙ্গবন্ধু হো হো করে হেসে উঠলেন। বঙ্গবন্ধুর মনের সরলতা সহজতা সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ল।

সেদিন আমি ভাবিনি বঙ্গবন্ধুকে পৃথিবী থেকে বাংলার নরাধম মানুষরা সরিয়ে দিবে। খুনী মানুষরা খুন করে, তার আদর্শ শালীনতায় ভরা, নিরাহঙ্কার ভরা, আভিজাত্যে ভরা, আদর্শের শিরোপা থেকে। বঙ্গবন্ধু চলে যাওয়ার পর থেকে জীবনের কোথাও যেন একটা ছন্দপতন হয়েছে আমার। অন্তরের কোমল প্রদেশে প্রচন্ড এক আঘাত খেলাম। লোকে বলে রাজনীতি, হত্যার রাজনীতি। তাহলে সে রাজনীতি আমার জন্য নয়। আমি একজন সমান্য লেখিকা। লেখা হৃদয়ের একটি  কোমল স্থান থেকে বের হয়< সে স্থানটি বড় চন্দনচর্চিত, হাজার গোলাপের সুন্দর মহিমায় মন্ডিত সেখানে হিংসা কার্পন্য ও মলিনতা নেই। পাদ পদ্মের বিভূষিত একটি হিরক খনি।

সেখানে বঙ্গবন্ধুর এই হত্যাকান্ডকে জনসাধারণ কিছুতে মেনে নিতে পারে না। আমার নিভৃত বুকের গহীন অরন্যের, নিস্তব্ধ স্পন্দনে, রক্তের শিরায়, আকুল কান্না করে যেন বলছে, বঙ্গবন্ধু তুমি কোথায় ? বঙ্গবন্ধু তুমি কোথায় ? যখন একা বসে থাকি হঠাৎ করে মনে হয় বঙ্গবন্ধু আমাকে বলছেন তো আপনারা ভুলে যাননি। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন ও ভাল জানতেন। অনেক অনেক অনুষ্ঠানে আমি দূরে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে আসতেন।

বঙ্গবন্ধুর বাসায় প্রায়ই যেতাম, তবে ছেলে-মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠতা লাভ করতে পারিনি। হাসিনার কথা বলতে গেলে লিখতে হয়। লোভ লালসা বর্জিত চন্দন চর্চিত শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা। তার ছেলে জয় হবার পর আমি একটি সামান্য উপহার নিয়ে গিয়েছিলাম, হাসিনা তা ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে বলেছিল, দোয়া করেন। এই তার সাথে আমার দুটো কথা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এল তখন আমি বিদেশে অবস্থান করেছিলাম। শুনেছি আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঢাকা মহানগরীর লোক নাকি শেখ হাসিনাকে একবার দেখার জন্য ভেঙ্গে পড়েছিল। তিনি যখন যেখানে গিয়েছেন লাখো লাখো লোকের সমাগম হয়েছে। আমার এক আত্মীয় বলল, ভোলা মহকুমার কথা। তখনও ভোলা মহকুমা জেলাতে পরিবর্তন হয়নি। হাসিনা গিয়েছিল ভোলাতে এত লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়েছিল যে হাসিনাকে দেখার জন্য ভোলার লোক তখন পর্যন্তও জানত না যে ভোলায় এত লক্ষ লক্ষ লোক আছে। ভাবতে বিস্ময় লাগে।

(চলবে—————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।