বোরহানউদ্দিনে বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৪ পালিত, সম্মাননা পেলেন ৫ জয়িতা
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা বহমান সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান নির্নয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ একান্ত জরুরী। বিগত ২০০ বছরের পৃথিবী ব্যাপি মানুষ এর বিভিন্নমুখী কর্মকান্ডই মূলত: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বময় প্রভাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নমুখী দেশ। পৃথিবীর উন্নত ধনি দেশ সমূহের ভোগবাদী অর্থনীতি ও জীবন ধারার সর্বনাশা কার্বন নি:স্বরণ হচ্ছে, দক্ষিণের এই প্রান্তে বাংলাদেশসহ গরীব দেশগুলির উপর। ঐতিহাসিকভাবে এই জনপদে জলবায়ুর প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। প্রভাবশালী উন্নত ও কর্তৃত্বশীল ধনি দেশগুলি বিরামহীনভাবে কার্বন পোড়ানোর ফলে, পোড়া দাগগুলি আমাদের নিজেদের শরীরে অবিরতভাবে ক্রীড়াশীল হচ্ছে। যা আমাদের জনপদে জনগণের স্বাস্থ্য ঝুকিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আঘাত হেনে চলছে। যার ফলে এই জনপদে প্রান্তিক জীবনে নিরন্তন পরিবর্তনের লড়াই অব্যাহত আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৮০০ সাল থেকেই শিল্প কারখানা ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস এর নির্গমন অনবরত বেরেই চলেছে।
বাংলাদেশে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস এর নির্গমন মাত্র ১৩৫ কেজি। যেখানে জাপানে ২.২ টন, আমেরিকাতে ৫.৩ টন এবং সারা দুনিয়াতে গড়ে ১.২ টন। বাংলাদেশে শিল্পখাতে ৬৫ ভাগ, বিদ্যুৎ ও মক্তি উৎপাদনে ১৭ ভাগ, যানবাহনে ১১ ভাগ, কৃষি ক্ষেত্রে ৪ ভাগ কার্বন নির্গমন হয়। এই পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে পৃথিবীতে বাংলাদেশ কম কার্বন উৎপাদনকারীদের পর্যায় পরে। তা সত্ত্বেও জলবায়ুগত পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীতে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় ৩.২ ফুট পানি বেড়ে গেলে বাংলাদেশের মোট ভূখন্ডের ১৭.৫ ভাগ ভূমি পানির নীচে তলিয়ে যাবে বলে ধারনা। এ ছাড়া ব্যাপক দূষণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে পরিবর্তীত জলবায়ু বিরুপ হওয়ার ফলে জীব বৈচিত্র আজ হুমকির মুখে পরেছে।
১৪ই নভেম্বর ২০১১ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সম্মেলন। দুই দিন ব্যাপি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় হোটেল সোনারগাঁও-এ। ১৯টি দেশ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ ঝুকিপূর্ণ দেশগুলিকে সহায়তা প্রদানে উন্নত দেশগুলি উদাসিন বলে মন্তব্য করেন। ঐ সম্মেলন শেষ হয় ১৪ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ১৪ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ এই মূহুর্তে পরিবর্তীত জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগণের টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তীত পরীস্থিতিতে কর্ম কৌশল তৈরী করে এগিয়ে যেতে হবে। আবহাওয়ার প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান বৈপিরত্বে খাপ খাইয়ে শষ্য এর আবাদ এর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জবী বৈচিত্র রক্ষায় উদ্যোগ টেকসই কর্ম কৌশল প্রণয়ন করা একান্ত জরুরী।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদী মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী জনগণ বান্ধব রাষ্ট্রিয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেশের ভিতরে কর্ম উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়াও একইভাবে সার্ক বা দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৈশ্বয়িক জলবায়ু মোকাবেলা ফান্ড ও কর্ম কৌশল তৈরী করা একান্ড জরুরী বলে মনে করি।
লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।