সর্বশেষঃ

মনিটরিং না থাকায় সক্রিয় সিন্ডিকেট

হঠাৎ অস্থির মাংসের বাজার

বাজারে সক্রিয় অসাধু মাংস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এ বছর দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে দাম নির্ধারণ না করে দেয়ায় তারা প্রথম রোজা থেকে প্রতিকেজি গরুর মাংসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয়।

১০ রোজা না যেতেই কেজিতে ১০০ বাড়িয়ে বিক্রি করছে। রাজধানীর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা দুই মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০০-৫২০ টাকা।

এদিকে শুধু গরুর মাংস নয়, কারসাজি করে রমজানের আগেই প্রতিকেজি খাসির মাংসে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে দেশি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। মাংসের বাজারের এই পরিস্থিতি দেখে হতাশ ভোক্তারা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পক্ষ থেকেও বাজারে সব ধরনের মাংসের দাম বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।

টিসিবি বলছে- চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৩০-৫৫০ টাকা, যা মার্চে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৬০ টাকা। এপ্রিল মাসে প্রতিকেজি গুরুর মাংসে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রায়সাহেব বাজারে গরুর মাংস ৫৮০-৬১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া মালিবাগ কাঁচাবাজারে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা। আর রামপুরা কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি।

রামপুরা বাজারে মাংস কিনতে আসা মো. হিমেল বলেন, গরুর মাংসের দাম বাড়ছেই। অসাধুরা দাম বাড়ানোর জন্য রমজান মাসকে টার্গেট করে।

তারা এ সময় দাম বাড়িয়ে দিয়ে পরে এক বছর বাড়তি দরেই বিক্রি করছে। এছাড়া এভাবে আরেক রমজান মাস এলে আবার দাম বাড়ায়, যা এক ধরনের প্রতারণা।

এ কারনে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা এখন মাংস কিনতে পারছে না। গরুর মাংস এখন উচ্চবিত্তের খাবার হয়ে গেছে। শান্তিনগর কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

বাজারে গরুর সরবরাহ কম তা বলা যাবে না। তবে একশ্রেণির অসাধু বিক্রেতা অজুহাত দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছে। অনেকেই ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবার দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়নি। যে কারণে যার যা ইচ্ছা, তাই হচ্ছে।

বিক্রেতারা শুধু দাম বাড়িয়েই বিক্রি করছে তা না। তারা মাংস পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ওজন বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এতে বাড়তি মুনাফা হচ্ছে; যা রমজান মাসে একেবারে ঠিক না।’

এমন পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগামী ঈদ পর্যন্ত গরুর মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

জানতে চাইলে সিসিএসের নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, ‘রোজা উপলক্ষে প্রতি বছর রাজধানীতে গরুর মাংসের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

৪৫ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসলেও এবার তা করা হয়নি। ফলে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ৬৫০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ঈদের আগে দাম আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।’

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে, সে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।

অভিযানের ফলে অনেক পণ্যের দাম কমে এসেছে। অসাধু অনেক ব্যবসায়ীকে আমরা শাস্তির আওতায় এনেছি। এবার মাংস ব্যবসায়ীদের পালা। দাম বাড়ার পেছনের কারণ আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনো ধরনের অসাধুতা পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সূত্র- দৈনিক যুগান্তর

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।