শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৭
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), আওয়ামীলীগের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-পল্লীতে আমি আওয়ামীলীগের অনেক কাজ করেছিলাম। অনেক পুলিশ, দারোগার কুনজরে আমাকে পড়তে হয়েছে। অনেক দারোগা পুলিশের বেষ্টনি আমার জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছিল। বিশাল জনসভায় আমাকে বক্তৃতা করতে হয়েছে। অথচ আমার স্বামী একজন সরকারী চাকুরে। তাকে অনেক ডি.সি. এক্সপ্লানেশন কল করেছিল। আমার কাজের সাথে জড়িত ছিল খুলনার অনেক গন্যমান্য মহিলা ও অনেক পুরুষ। সালেহ উদ্দিন ইউসুফ, সুফিয়া আলী, রিজিয়া খানম, হেলেনা আলী, দেলদার আহমেদ ও আব্দুল জলিল এডভোকেট এদের কথা মনে আছে। দেলদার সাহেব করাচীতে ইষ্ট পাকিস্তানের ফরেন মিনিষ্টার ছিলেন।
আমার স্বামী তার চাকুরীর অসুবিধার জন্য আমাদে দু’কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়েন নি। তবু কাজ করে গেছি, কিসের এক রাজনীতির মোহ দিক থেকে দিগন্তে উল্কার মত ছুটে বেড়িয়েছি। রাজনীতি তখন আমার মজ্জায় মজ্জায় মিশে ছিল। আমার তারুন্যের অহঙ্কার ছিল একটা কিছু করবার জন্য।
আমার উপর আওয়ামীলীগ থেকে অণুরোধ এল সোনার বাংলার প্রথম স্বাধীনতা উৎসবে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য। আমি অগ্রনী গার্লস স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল ও ধানমন্ডি গার্লস স্কুল এই ৩ স্কুল নিয়ে অগ্রনী গার্লস স্কুল ও পরে আজিমপুর গার্লস স্কুলে মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং এর আয়োজন করে আমি নিজে দাঁড়িয়ে কমান্ড করে ট্রেনিং শুরু করলাম। প্রায় পনেরো দিন নিরলস পরিশ্রম করে ৩টি প্লাটুন তৈরী করলাম তাতে নব্বইটি মেয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। আজিমপুর গার্লস স্কুলে গার্ড অব অনার দেওয়ার বন্দোবস্ত করলাম।
এবার এই গার্ড অব অনারের জন্য সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য আমন্ত্রণপত্র ছাপা হল। ব্যান্ড, বিউগলের ও ড্রামের সাথে ট্রেনিং দিলাম। স্যালুডিন ব্যাজ রাখা হল। চারপাশে ফুলের টবের আয়োজন করলাম। সোনার বাংলার পতাকা উত্তোলন করবেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা উৎসবের দিন সকাল আট ঘটিকায়।
বঙ্গবন্ধু এলেন সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা, গায়ে মুজিবকোট, পায়ে পামসু। বঙ্গবন্ধু এসে স্যালুডিন ব্যাজে দাঁড়াবার পর সাথে সাথে মেয়েদের এটেনসান হাবার কমান্ড করলাম, বায়েদি লেফট কুইক মার্চ করে অর্ডার কারার সাথে সাথে মেয়েরা মার্চ করে চলল, সাথে সাথে ব্যান্ড, বিউগল ও ড্রামের আওয়াজে মেয়েদের মার্চের শব্দে আজিমপুর গার্লস স্কুলের মাঠটি সেদিন থর কম্প হয়ে উঠেছিল। আইজ রাইট বলার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুড জানাল। আমিও তাকে মার্চের মধ্যে স্যালুড করে চলে গেলাম। তাজউদ্দিন সাহেব খুব ব্যস্ততা দেখালেন।
(চলবে———–)