শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), রাতহয়ে গেলে রেডিওটা কানের কাছে নিয়ে রেডিওতে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর পেতাম। মুক্তিযুদ্ধের গান শুনতাম। জয় বাংলা, বাংলার জয়। মুক্তিযুদ্ধের নিত্যনতুন জয় করার সুসংবাদ পেতাম। জীবনটা বড় একঘেয়ে চলছিল। আওয়ামীলীগের কোন বন্ধু-বন্ধবের খোজ খবর পাই না। ভয়ে, আতঙ্কে কাল যাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর কথা জানবার জন্য প্রাণটা বড় আকু-পাকু করছিল। বঙ্গবন্ধু কেন আছে, কেমন থাকলেন। শুধু মু্ক্তিযুদ্ধের কথা, মুক্তিযুদ্ধের বাজনা মাঝে মধ্যে গর্বে বুক দুলে উঠে।

ওয়েস্ট পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রণতুর্য্য আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘোরাফিরা করছে। নিধন করছে ঘরের মা বোনদের। হত্যা করছে ঘরের নিভৃত কোন থেকে টেনে এনে আমার সোনার ছেলেদের। মা বোনদের আকুল কান্নায় আমার সোনার দেশের আকাশ বাতাস পাথর হেয় উঠেছে। কেন যেন শুনেও শুনতে চায় না। হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার ভয়ে আতংকে আর উন্মুখ হয় না।

শুনছি মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে পাকিস্তানী সৈন্যদের হয়ে দিচ্ছে। আমাদের জনগণ ওদের পুকুরে, নদীতে নৌকা ছিদ্র করে ডুবিয়ে মারছে। শীঘ্রই আমরা পাকিস্তানীদেরকে হারিয়ে দিয়ে সোনার দেশকে স্বাধীন করব। সে আশায় বুক বেধে আছি। খুব নাকি পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের দেশে হত্যাকান্ড চালাচেছ। ইনটেলেকচ্যুয়ালদের বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে আমাদের দেশটাকে বুদ্ধিজীবী শূন্য করছে। জ্ঞানী লোক আর দেশে থাকছে না।

ডাক্তার রাব্বীর সাথে আমার একদিন তার চেম্বারে দেখা হল। আমি আর একজন প্যাশেন্ট ছিলাম। উনি বললেন, জানেন এই পাকিস্তানীরা আমাদের মুরগীর মত খাচায় রেখে একটি একটি করে জবাই করবে। চৌদ্দই ডিসেম্বর আলবদর, রাজাকার বাহিনীর লোকরা রাব্বীর স্ত্রীর বুকের কাছে বন্দুক রেখে রাব্বীকে তার চোখের সামনে দিয়ে ধরে নিয়ে গেল। তারা রাব্বীকে বাড়ী থেকে ধরে এনে চোখ বোথে হত্যা করল। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মীরপুর বধ্যভূমিতে তার লাশ পাওয়া গেল। আমি একটি ডাক্তার মেয়ের সাথে তার বাড়ীতে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিন দিন তিন রাত আমি ঘুমাতে পরিনি। দেখে বড় ব্যথা লাগল, এ রকম একটি লব্ধ প্রতিষ্ঠিত যশ ও সুনামের ডাক্তার বাংলাদেশে জন্মাবে কি না সন্দেহ।

ওয়েস্ট পাকিস্তানের এক লক্ষ সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও ওয়েস্ট পাকিস্তানের মেজর জেনারেল নিয়াজী, বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর, জেনারেল অরোরার কাছে ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করল। কত লোক দেখতে গেল, কত দেখতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারাও গেল। দেশ স্বাধীন হল। স্বাধীনতার লাল সূর্য শিখা, লাল পতাকা স্বাধীন আকাশের বুকে, কত হাজার হাজার বাড়ীর ছাদে উড়ছে। আনন্দে, খুশিতে বুকে আমার কত স্বপ্নের বাসা বাধল।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।